বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩১ অপরাহ্ন

গঙ্গার চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনায় বসছে ঢাকা-দিল্লি

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাচ্ছে। চুক্তিটি নবায়ন করতে উভয়পক্ষই সম্মত আছে এবং এটি নবায়নে দুইপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) কর্মকর্তারা দিল্লিতে বৈঠকে বসছেন। 

যৌথ নদী কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকার পক্ষ থেকে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কারিগরি দলের নয়াদিল্লি সফর করার কথা। বৈঠকে মূল আলোচনা হবে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।

বাংলাদেশের পট পরিবর্তনে ঢাকা-দিল্লি দুইপক্ষের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও পানি ইস্যুতে উভয়পক্ষ নিয়মিত আলোচনা করছে। চলতি বছরের মার্চে দুইপক্ষের মধ্যে দিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে প্রতি বছর দুইবার করে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গা ছাড়া আর কোনো নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টনের প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। এর প্রধান কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসহযোগিতা ও তার আপত্তি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সই করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও শেখ হাসিনা। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। আগামী বছর সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ২০২৪ সালের জুন মাসে দুই দেশই ঘোষণা দেয় যে, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি নবায়নের জন্য কারিগরিগত আলোচনা শুরু হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) গত ১ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদে জানান যে. ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। তবে এই নবায়নের আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারসহ সব অংশীদারদের কাছ থেকে গৃহস্থালি কাজে এবং কল-কারখানায় কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন সেই সম্পর্কে মতামত পাওয়া গেছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে দুইপক্ষ কিছু ইস্যুতে একমতে আসতে না পারায় কোনো দলিল (মিনিটস) সই হয়নি। আবার গত বছর এই চুক্তি নবায়নের জন্য উভয়পক্ষ আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিলেও সম্প্রতি ভারতীয় সংসদে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী জানান যে, এই ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। সামনের বৈঠকে মূলত দিল্লি কী করতে চায় তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, “এটি আমাদের রুটিন বৈঠক। গঙ্গা চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আলোচনা, চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। অফিশিয়াল এই আলোচনায় আমরা অন্য কোনো এজেন্ডা নিয়ে কথা বলি না। আমাদের আরও ১০-১৫টা এজেন্ডা আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করি না। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে মূল আলোচনা।” 

এদিকে, গত ডিসেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে গঙ্গা নদীর চুক্তি নবায়ন ইস্যূতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব আলাপ করেন। সেসময় বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছিলেন, আলোচনায় আন্তঃনদী বিষয়সমূহ গুরুত্ব পেয়েছে। গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাবে। সে প্রেক্ষিতে তা নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা জানিয়েছে, গত ৬-৭ মার্চ কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মার্চ ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত যৌথ কমিটির ৮৬-তম সভা এবং গত ৭ মার্চ কারিগরি পর্যায়ের বৈঠক হয়। যা দুই দেশের মধ্যকার নিয়মিত বৈঠক।

গত বছর নভেম্বরে ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত যৌথ কমিটির ৮৫-তম সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর তা কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অন্যদিকে, কারিগরি পর্যায়ের সভায় দু দেশের মধ্যে আন্তঃ-সীমান্ত নদী-বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এবারও তাই হয়েছে। বিগত ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি বাস্তবায়নের পর থেকেই প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের চার সদস্যের দল এবং ভারতের চার সদস্যের দলের উপস্থিতিতে প্রতিদিন চারবার গঙ্গার পানি মাপা হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী যার যতটুকু পানি পাওয়ার, তা ভাগ করে নেয়।

আর এ বিষয়গুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে দিল্লি ও ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি যায় এবং চুক্তি ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না বা আমরা যতটুকু পানি পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছি কি না, সে বিষয়গুলোই তখন পরীক্ষা করা হয়।

কারিগরি দলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পানির ভাগাভাগি গাইডলাইন অনুযায়ী ঠিকভাবেই হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হলেও এবার গঙ্গার পানি প্রবাহ কম সে বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভারতকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

গত মার্চে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কিছু বিষয়ের আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পারার কারণে বৈঠকের পর কোনো মিনিটসে সই করা হয়নি। তবে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কোন সভায় দুপক্ষ এক বা একাধিক বিষয়ে একমত না হলে মিনিটস স্বাক্ষর নাও হতে পারে। অতীতেও বিভিন্ন সভায় এরকম ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষ পরবর্তী সময়ে কূটনৈতিক মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে এটি স্বাক্ষর করার প্রচেষ্টা নেবে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com