শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৩ বছর পর ঢাকার পথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে সরকার চাপ দিলে পদত্যাগ করব : সিইসি পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী গাজা শহরে ইসরায়েলি হামলা জোরদার, নিহত আরও ৬৫ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে যা জানাল পাকিস্তান গণমাধ্যমকে সতর্ক করছি, শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলেই আইনি ব্যবস্থা কুমিল্লায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাইভেটকারের ৪ যাত্রী নিহত গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি ‘নতুন কুঁড়ি’ হতে হবে নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক: তথ্য উপদেষ্টা

রুবেল দেখিয়েছেন সাফল্য শুধু চাকরিতে নয়, ঘাস থেকেও পাওয়া যায়

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

সকালের নরম রোদে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৈট্টা গ্রামের মাঠে যখন বাতাসে দুলছিল সবুজ ঘাসের সারি, তখন সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন এক তরুণ। যে কেউ তাকে দেখে সাধারণ কৃষক ভাবতে পারেন। তবে, এই তরুণ মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। নাম রুবেল হোসেন। তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। 

রুবেলের এই কৃষিযাত্রা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। কয়েক বছর আগে নিজের খামারের গরুর খাবারের জন্য এক বিঘা জমিতে ঘাস রোপণ করেন তিনি। তখনও ভাবেননি, এই ছোট উদ্যোগ একদিন তার জীবন বদলে দেবে। বাজারে ঘাসের চাহিদা বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক দিকটা তার চোখে পড়ে। 

রুবেল বলেন, “প্রথমে গরুর খাবারের চাহিদা মেটাতে ঘাস লাগাই। পরে দেখি, অনেকেই কিনতে চাইছেন। তখন বুঝলাম, এর মাধ্যমে ভালো একটা ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।”

বর্তমানে রুবেলের খামারের প্রায় ২০ বিঘা জমিজুড়ে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের স্মার্ট নেপিয়ার, গুয়াতেমালা, জাঞ্জিবার, পাকচং আর তাইওয়ান হাইব্রিড ঘাস। প্রতি বিঘায় বছরে ছয়বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যায়। গড়ে এক বিঘা জমি থেকে বছরে পাওয়া যায় প্রায় ৬০ টন ঘাস। বাজারে যার মূল্য কয়েক লাখ টাকা।

একটু হিসেব করলে দেখা যায়, এক বিঘা জমিতে খরচ বাদে বছরে লাভ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সেই হিসাবে রুবেলের ঘাসের জমি থেকে বছরে আয় হয় ৪০ লাখ টাকা।

রুবেল জানান, ঘাস বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে। এক বিঘা জমিতে ঘাস উৎপাদন হয় ৬০ টন, যার বাজারমূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ২০ বিঘা জমিতে জাতভেদে ১০০ থেকে ১২০ টন ঘাস উৎপাদন হয়। যার বাৎসরিক বাজারমূল্য প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। 

রুবেলের সাফল্যে আশেপাশের মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। নয়াডিঙ্গী গ্রামের কৃষক আনসার আলী বলেন, “ওকে দেখে আমিও এক বিঘা জমিতে ঘাস লাগালাম। যদি ফলন ভালো হয়, জমির পরিমাণ আরো বাড়াব।”

শুধু প্রবীণ কৃষকরাই নন, তরুণরাও উৎসাহী হচ্ছেন। কলেজ ছাত্র আলমগীর হোসেন জানান, “রুবেল ভাই আমাদের চোখে এক উদাহরণ। আমরাও কয়েকজন বন্ধু মিলে জমি ঠিক করেছি, শিগগিরই কাজ শুরু করব।”

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “কৈট্টার মাঠে দাঁড়িয়ে যখন সবুজ ঘাস দোল খেলে, তখন মনে হয়- এ শুধু ঘাস নয়, এ এক তরুণের স্বপ্ন, পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্পের প্রতিচ্ছবি। রুবেল এখন কেবল একজন সফল চাষিই নন; তিনি এলাকার তরুণদের চোখে এক অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন, কৃষিই হতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।” 

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশে যখন অনেক তরুণ চাকরির জন্য হাহাকার করছেন, সেখানে রুবেল প্রমাণ করেছেন সাফল্য শুধু অফিসের ডেস্কে সীমাবদ্ধ নয়। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় আর ধৈর্য থাকলে কৃষির মতো পেশা দিয়েও তৈরি করা যায় সুন্দর ভবিষ্যৎ।”

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “রুবেল একজন শিক্ষিত যুবক, যিনি কৃষিকে বেছে নিয়েছেন। তার মতো তরুণেরা কৃষিতে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি।”

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com