বাংলাদেশের যুবসমাজ শুধু দেশের ভবিষ্যৎ নয়, তারা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের বর্তমান শক্তি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এক বছর আগে শুরু হওয়া বিশাল গণআন্দোলনকে ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা ও পদ্ধতিগত সংস্কারের আন্দোলনে রূপ দিতে যুবসমাজের নেতৃত্ব মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের আয়োজিত ‘জুলাই বিয়ন্ড বর্ডার’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার এক বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত বলা হয়, যুবসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু বাংলাদেশে তারা আমাদের বর্তমান হয়ে উঠেছে। যুবসমাজের নেতৃত্বে শুরু হওয়া গণআন্দোলন দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল ভিত্তি তৈরি করেছে। তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনটি একটি গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ এতে শামিল হয়েছিল।
তৌহিদ হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সংস্কার ও ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে পরিচালিত করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নতুন মাত্রা পায়, যা দেশকে একটি সুন্দর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শক্ত ভিতের পথে এগিয়ে নিয়েছে। যেখানে সবার জন্য থাকবে সমান সুযোগ আর নতুন ভবিষ্যতের আশা।
তিনি গত এক বছরে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে দমনমূলক আইন বাতিল, সাংবিধানিক সংস্কার শুরু, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা।
তিনি বলেন, আমরা এমন সব আইন বাতিল করেছি, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করতো এবং জনগণের আস্থা নষ্ট করতো। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কারের মাধ্যমে আমরা ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা, সকলের অংশগ্রহণ এবং মানুষের ভোটের মূল্য পুনরুদ্ধার করছি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া অনেক যুবক এখন দেশের নীতি-নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
উপদেষ্টা বলেন, যারা এক সময় প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারা এখন বিভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করছেন, ডিজিটাল উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং শাসন ও উন্নয়ন নীতিমালা গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন।
বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতার বৈশ্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের গল্প কেবল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি বিশ্বজুড়ে যুব, শান্তি ও নিরাপত্তা, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ভবিষ্যৎ চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে যুব, শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মসূচি, ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কিংবা সাম্প্রতিক ভবিষ্যৎ চুক্তি কোনো দূরের কথা নয়, এগুলো আমাদের বাস্তব জীবনেরই অংশ।
তরুণদের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলেন, শুধু স্মরণ বা উদযাপনের গণ্ডিতে থাকলে চলবে না, এর বাইরে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এমন নীতি ও সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে যুবকদের নেতৃত্বের কেন্দ্রে নিয়ে আসা যায়। তাদের সাহস, শক্তি আর সৃজনশীলতা আমাদের শান্তি, ন্যায় ও টেকসই বিশ্বের পথে পথ দেখাবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যৌথভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রথমবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ যুব অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ড. বালাকৃষ্ণণ তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ পরিবর্তনে যুবসমাজের গঠনমূলক অংশগ্রহণকে জাতিসংঘ সর্বদাই উৎসাহিত করে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ যেভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তা অন্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।
সূত্র : বাসস
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ