মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
সাক্ষীর জবানবন্দি : হাসপাতালে শেখ হাসিনা ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশ দেন ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের পর্যটন খাত এখনো অনেক পিছিয়ে : শিল্প উপদেষ্টা চাকরি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের তথ্য যাচাই করছে সরকার: উপদেষ্টা সেপ্টেম্বরে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু: গণশিক্ষা উপদেষ্টা বাংলাকে ‘বাংলাদেশের ভাষা’ বলায় চটলেন মমতা রাশিয়াকে যুদ্ধে অর্থায়ন করছে ভারত, অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সমালোচনার পাশাপাশি ভালো দিকগুলোও দেখতে হবে : অর্থ উপদেষ্টা ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবি, ৬৮ শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু

পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে
তিন সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীর ভাঙনের দুশ্চিন্তায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের নদীর পাড়ের মানুষ। ফরিদপুর সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। নদীরপাড় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি রাস্তা ইতিমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

পদ্মার ভাঙনে অনেকেই বসতভিটা হারাতে বসেছেন। কেউ কেউ তাদের পৈত্রিক বাপ-দাদার ভিটে থেকে ঘর সরিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।প্রতিবছরই জুন ও জুলাই মাসে নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা যায়।

গত কয়েক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার শয়তান খালি ঘাট, খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, গোপালপুর ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।

গত রবিবার (১৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীভাঙন ঝুঁকিতে আছে সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের মুন্সীরচর, পিয়াজখালির চর, আকোট, আকোটেরচর, ছলেনামা ও খোকারাম সরকারের ডাঙ্গীতে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। এই ঘরগুলো কয়েকগজ দূরেই পদ্মা।

এ ছাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, নুরুদ্দিন সরদারকান্দি, কাচিকাটা গ্রাম, নন্দলালপুর, ফকির কান্দি, তালপট্টির চর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদার কান্দি এবং চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দূর্বারটেক, মফিজদ্দিনের কান্দি, হাফেজ কান্দি, রাড় চরগজারিয়া ও গিয়াস উদ্দীন মুন্সীর কান্দি গ্রাম পানিতে ভাঙছে।

এতে কমপক্ষে ৬০টির বেশি ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে নদীর পাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। অনেকে বাড়িঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় রাখলেও খুঁটি ও বেড়া লাগিয়ে রাখছে, যদি ভাঙন থামে সেই আশায়।অন্যদিকে, চরভদ্রাসন উপজেলার উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপি ডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত আছে।

নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়ন কাচিকাটা গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব শেখ বলেন, ‘নদীর পাশেই আমার ঘর ছিল। হঠাৎ দেখি ফাটল, রাতে নদীর ভাঙন বেশি হয়, ঘর ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি সরিয়ে নিয়েছি। যদি না সরাতাম এখন আমার বাড়ি নদীতে থাকত।’

আকোটের চর ইউনিয়ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী গ্রামের গুছগ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলাম বলেন, ‘এখান থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। বালু উত্তোলন যারা করেন তারা প্রভাবশালী, তাই কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পারত না, প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দিত। এখন নদী ভাঙনে তার খেসারত দিচ্ছে এলাকাবাসী।’

ঢেউখালি ইউনিয়নের শয়তান খালি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কাজী নজরুল বলেন, ‘পদ্মা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভবত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে ফসলি জমির সঙ্গে বেশকিছু ঘরবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।’

আকোটের চর ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার কৃষক ইসমাইল মুন্সি বলেন, ‘প্রতি বছর নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে কিছু ভূমিখেকো। তাই নদীভাঙনে অনেক ঘরবাড়ি ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে। এখনো নদীর পাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে। মাটিগুলো বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।’

রিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘কে করে দেবে আমাদের ঘরবাড়ি? সরকার একটি ঘর দিয়েছে আমি সেখানে থাকি। নদী যেভাবে ভাঙছে হয়ত আর বেশিদিন থাকতে পারব না। ঘর ভেঙে নিয়ে যাবে নদীতে। কীভাবে থাকব, কীভাবে চলব, কে আমাদের খাওয়াবে বলতে পারছি না।’

চর ঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে আমার ইউনিয়নের ৪টি পরিবারের ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গিয়েছে। ৩ হাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি, এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’

আকোটের চর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, ‘শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই নদীভাঙন হচ্ছে। এখন চরাঞ্চলের মানুষের নদী ভাঙন নিত্য দিনের সঙ্গী। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি দ্রুত তারা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা খাতুন বলেন, ‘নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, গত বিশ দিনে যে স্থান গুলোতে ভাঙন হয়েছে সেখানে নদীর গভীরতা অনেক বেশি, তাই সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।

ইতিমধ্যে আমাদের একটি টিম ভাঙন রোধে কাজ করছে, তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করে আমাদের নিকট সাবমিট করবেন। এরপর ভাঙন রোধে টেকসই স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠাব।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com