মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সীমিত হামলার পরিকল্পনায় এখনো অটল ইসরাইল

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সীমিত হামলার পরিকল্পনায় এখনো অটল ইসরাইল

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আপাতত সমর্থন না পাওয়া সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সীমিত হামলার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসেনি ইসরাইল। দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং এই বিষয়ে অবগত আরও দুই সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার (২০) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ইসরাইল বরাবরই ঘোষণা দিয়ে এসেছে—তারা কখনোই তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও দাবি করেছেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো আলোচনা তখনই ফলপ্রসূ হবে, যদি তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন এক দফা পরমাণু আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে ইসরাইল এমন হামলার পরিকল্পনা করছে। আগামী শনিবার রোমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এই প্রাথমিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে ইসরাইল ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন ধরনের সামরিক পরিকল্পনা তুলে ধরেছে—যার মধ্যে কিছু রয়েছে এই গ্রীষ্মে বা বসন্তেই হামলার সময়সীমা ধরে সাজানো। সূত্রগুলো জানায়, এসব পরিকল্পনায় রয়েছে আকাশপথে হামলা ও কমান্ডো অভিযান—যা ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কয়েক মাস বা বছরখানেক পিছিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা ও ইসরাইলের বিকল্প পরিকল্পনা

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক পথকে অগ্রাধিকার দিতে চায় এবং এই মুহূর্তে সামরিক হামলার পক্ষে নয়।

তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থন ছাড়াই সীমিত পরিসরে একটি হামলা চালাতে পারে। এটি হবে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত হামলাগুলোর তুলনায় ছোট পরিসরের।

তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না বা কবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ, আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। ইসরাইলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তেহরানের হুঁশিয়ারি

ইরানের এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ইসরাইলের সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত এবং হামলা হলে তা কঠোর ও আপসহীন প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে।

তিনি বলেন, আমাদের নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণ রয়েছে যে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। এটি আংশিকভাবে চলমান কূটনৈতিক উদ্যোগে অসন্তোষ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টার ফল।

বাইডেন প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

নেতানিয়াহু অতীতে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে এই পরিকল্পনার একটি সংস্করণ শেয়ার করেছিলেন। তখন বাইডেন প্রশাসন জানি , তেহরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ দ্রুততর না করে বা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের বহিষ্কার না করে, তবে সামরিক হামলা যৌক্তিক হবে না।

ইসরাইল এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা এবং হামলার পর ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধ মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চেয়েছে। যদিও সীমিত হামলা বড় ধরনের সহায়তা ছাড়াই সম্ভব, তথাপি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমার মতো ভারী অস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে।

সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সময়োপযোগিতা

সামরিক ও পারমাণবিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কিছু অংশ মাটির গভীরে থাকায় এমনকি বড় আকারের হামলাও তা চিরতরে ধ্বংস করতে পারবে না—শুধু সাময়িকভাবে পিছিয়ে দেবে।

নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, এই সংকটের সমাধান হতে পারে দুইভাবে—একটি হলো চুক্তির মাধ্যমে, কিন্তু তা হতে হবে লিবিয়া স্টাইলে: সবকিছু ধ্বংস করে, আমেরিকানদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ বিলুপ্তিকরণ। আর অন্যটি হলো, তারা সময়ক্ষেপণ করবে, আর আমাদের হাতে থাকবে সামরিক পথ।

ইসরাইলের দৃষ্টিতে এখনই ইরানে হামলা চালানোর ভালো সময় হতে পারে। কারণ, গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা তাদের ঘায়েল করেছে।  ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও অক্টোবর ২০২৪ সালে এক সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবে কবে এই হামলা হতে পারে, তা নিয়ে মুখ খুলছে না ইসরাইল। এক শীর্ষ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এটি নিয়ে এখনই টাইমলাইন নির্ধারণ অর্থহীন।

চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইলের এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক বড় সংঘাতের সূচনা করতে পারে—যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ডেকে আনবে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com