ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে প্রচণ্ড ভিড় ও ঠাসাঠাসি, ফলে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ও দরজায় ঝুলে ফিরছেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ও গাদাগাদি করে ট্রেনযাত্রা করতে হয়েছে তাদের। অন্যদিকে, ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে কর্মজীবী মানুষরাও ট্রেনে শেষ সময়ে রাজধানীতে এসেছেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি গতকাল (১৪ জুন) শেষ হয়। রোববার (১৫ জুন) থেকে শুরু হয়েছে নিয়মিত কর্মদিবস।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর অধিকাংশের আসন সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজারের মধ্যে। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। আজ দেশের প্রধান ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেন থেকে হাজারেরও বেশি যাত্রী নামছেন। ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ছাদে চড়েই ঢাকায় ফিরেছেন, যা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য।
এদিকে ঢাকা থেকে বর্হিগামী যাত্রীদের সংখ্যাও ছিল অনেক। তারা তাদের নির্ধারিত ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মের পিলারগুলোর নিচে বসার জায়গায় অপেক্ষা করছেন। এদের কেউ আশেপাশের জেলা থেকে এসে ঢাকা স্টেশন হয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার কেউ ঢাকা থেকেই রওনা হয়েছেন। মূল ছুটি শেষে সবাই ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছেন এখানে।
ঢাকায় আসা যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহান চৌধুরী বলেন, ট্রেনটি মধ্যরাতে তারাকান্দি থেকে ছেড়ে সকাল ৮টার আগেই ঢাকায় আসে। ফলে এই ট্রেনে সকালে অফিসে যাওয়ার মানুষের চাপটা বেশি থাকে। আমি জামালপুর থেকে উঠেছি। তখন ট্রেনের ভেতর অনেক মানুষ ছিল। কোনো রকম গিয়ে নিজের সিটে বসতে পেরেছি। এরপরের স্টেশনগুলো থেকে আরও মানুষ উঠেছে, ফলে চাপ আরও বেড়েছে। ট্রেনের ভেতরে গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সাব্বির আহমেদ বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে পীরগঞ্জ স্টেশন থেকে কোনো রকম উঠতে পেরেছিলাম। ট্রেনের ভেতরে ওঠার মতো কোনো জায়গা ছিল না। তখনই ট্রেনের ছাদে মানুষ দেখেছি। পরের স্টেশনগুলো থেকে মানুষজন উঠতে পেরেছে কিনা, বলতে পারছি না। এই ট্রেনে প্রচুর মানুষ ঢাকায় এসেছে আজ।
এদিকে কাজের সুবাদে ঢাকাও ছাড়ছেন অনেকে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মনিরুজ্জামান বলেন, আমি ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকি। রংপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে আছি। কর্মসূত্রেই সেখানে যেতে হচ্ছে। আজ থেকে কাজ শুরু হলেও আগে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। ফলে আজ ট্রেনে যাচ্ছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ট্রেনের গ্রুপগুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাদে উঠে মানুষজন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এসব ছবি সেসব স্টেশনে থাকা যাত্রীরা প্রকাশ করেছেন।
স্টেশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে যেসব ট্রেন ঢাকায় এসেছে প্রত্যেকটা ট্রেনেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী সংখ্যা ছিল। গতকালও ঢাকায় আসা প্রত্যেকটা ট্রেনেই এমন ভিড় ছিল। আজও সকালের ট্রেনগুলোতে এমন ভিড় হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ