বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: দেশের সর্বত্রই ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত। আঠারটি জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে নিরপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশে উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে দেশের সব কটি সংস্থা। আজ শনিবার দুপুরের মধ্যেই এটি বাংলাদেশের চট্রগ্রাম ও বরিশাল উপকূল অতিক্রম করবে।
ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, সন্দ্বীপ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেরা ও দ্বীপগুলোতে মেডিক্যাল টিম এবং দূর্যোগ মোকাবেলা কর্মীরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জেলা প্রসাশকদের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে,আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ দুপুরের মধ্যেই এটি বাংলাদেশের চট্রগ্রাম বরিশাল উপকূল অতিক্রম করবে। সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্রগ্রাম থেকে ৩৯০, কক্সেসবাজার থেকে ৩৭৫ ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। ঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর ‘বিপদ সংকেত’ দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারকে দেখাতে বলা হয়েছে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত সংকেত।
ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে ঊপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আগেই। ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ৪ থেকে ৫ ফুট জলোচ্চ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে। ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেসবাহউদ্দিন বলছেন, ‘‘ঝড়টি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসাবে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজেরা মাঠে মাঠে ঘুরে সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার বিষয়াদি তদারকি করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুদ করা হয়েছে।’’
বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং স্বেচ্ছাসেবীদেরও এ কাজে সহায়তা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। একই ধরণের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী সহ অন্য উপকূলীয় জেলাগুলো থেকেও।
শুক্রবার বিকাল থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ।
ঝড়ের প্রভাবে এর মধ্যেই শ্রীলংকা এবং ভারতের ওড়িশাসহ পূর্ব উপকূলে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভোলার প্রত্যন্ত একটি উপকূলীয় থানা, লালমোহনের একজন বাসিন্দা মোঃ. ইউসুফ বলছেন, ”দুপুর থেকেই ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খাবার দাবার সংগ্রহ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি নিলেও, এখনো যেতে শুরু করেননি। হয়তো ঝড়ের মাত্রা আরো বাড়লে তারা সেখানে চলে যাবেন।”
কুতুবদিয়া দ্বীপের একজন বাসিন্দা আলাউদ্দিন আল আজাদ জানিয়েছেন, তাদের এলাকার আবহাওয়া অনেকটাই গুমোট হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য সতর্ক হয়ে আছেন। ঝড় আরো বাড়লে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সাত নম্বর সংকেতের পরই সাধারণত মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়ে থাকে।
ঝড়টি কতটা শক্তিশালী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে?
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলছেন, ”সাইক্লোনিক ঝড়ের যে গতি থাকে, এটাও সেরকম গতিতেই আসবে। হয়তো এটা মাঝারি ধরণের ঘূর্ণিঝড় হবে। এটির ঝড়ো আকারের বাতাসের গতিবেগ হবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।”
দেশে প্রতিবছর ছোটখাটো মাত্রার ঝড় হলেও, সর্বশেষ বড় আকারের ঘূর্ণিঝড়, সিডরের শিকার হয়েছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরে। সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল দুহাজারের বেশি মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন, এবারো ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সবরকম প্রস্তুতিই তারা নিচ্ছেন।
ভোলায় ১ কিশোর নিহত
রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ঘর চাপা পড়ে আকরামুল (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তার বাবার নাম মো. মফিজ। শনিবার ভোর ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
উপজেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস