এক পাশে মাশরাফি বিন মুর্তজা, আরেক পাশে তামিম ইকবাল। আশপাশে ঘিরে আছেন ডজন খানেক সাংবাদিক। বাইরের তাপমাত্রায় মিরপুর একাডেমি মাঠের ছোট ড্রেসিংরুমের রীতিমতো ওভেন-গরম অবস্থা। তবু থামছে না আড্ডা।
মাশরাফিকে ঘিরে এ রকম আড্ডা প্রায় প্রতিদিনই হয় মিরপুরে। কাল যোগ হলেন তামিমও। আর তাতে এ দুজনের অজান্তেই সৃষ্টি হলো একটা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের আগের দিন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অধিনায়কের যেখানে দুই মেরুতে থাকার কথা, সেখানে তাঁরাই কিনা এক ছাদের নিচে!
আড্ডার পুরোটাই ‘অফ দ্য রেকর্ড’। তারপরও কিছু নির্দোষ কথা তো থাকেই, যেগুলো নিখাদ বিনোদনের খোরাক হতে পারে। আবাহনী-কলাবাগানের আজকের ম্যাচ নিয়ে দুই দলের অধিনায়ক মাশরাফি-তামিমের খুনসুটির কথাই ধরুন। তামিম বারবার ভয় দেখালেন, মাশরাফি ব্যাটিংয়ে এলেই নাকি তাসকিনকে বল দেবেন। তবে একটু পরই বের হয়ে এল তার ওপেনার সত্তা। মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রথম ওভার কাকে দিয়ে করাবেন?’
আড্ডা শেষে দুই অধিনায়ক কথা বলেছেন আনুষ্ঠানিকভাবেও। তবে সে প্রশ্নোত্তর পর্ব আবাহনী-কলাবাগান ম্যাচ ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ল পুরো প্রিমিয়ার লিগেই। মাশরাফি, তামিম তখন আর ঠিক প্রিমিয়ার লিগের দুটি দলের অধিনায়ক নন। হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের মুখপাত্র।
এই যে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন দলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লিগ খেলেন, নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজটা তাঁরা কেমন উপভোগ করেন? প্রশ্নটা ছিল তামিমের কাছে। জবাবে উপভোগের চেয়ে দায়িত্ববোধের কথাই বেশি বললেন তিনি, ‘জাতীয় দলের যে ১৫ জন আছি, তাঁদের একটা দায়িত্বও আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা যেভাবে খেলি, পরিকল্পনা করি…সেই জিনিসগুলো ক্লাবের তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা সবাই যেন এটা অবশ্যই করি। জাতীয় দলে নতুন এসে তাহলে আর কেউ চমকে যাবে না।’
তামিমের পরামর্শ সবাই মানলে বিপিএলের মতো প্রিমিয়ার লিগের ড্রেসিংরুমও তরুণ ক্রিকেটারদের দিতে পারবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহ। অগ্রজদের কাছ থেকে সেটা নিয়ে তাঁরা যদি মাঠের পারফরম্যান্সেও আলো ছড়াতে পারেন, এই ক্রিকেটারদের সামনে আরও বড় দরজা খুলে যাওয়ারই সুযোগ দেখেন মাশরাফি, ‘ঘরোয়া চার দিনের ক্রিকেট এবং ঢাকা লিগ, এখান থেকেই ভবিষ্যতের খেলোয়াড় বাছাই করতে হবে। এখানে ভালো খেলেও কেউ সুযোগ না পেলে সেটা দুঃখজনক।’
মাশরাফি যেটা বললেন, ক্রিকেটাররাও সে আশা নিয়েই প্রিমিয়ার লিগে খেলেন বলে ধারণা তামিমের। এমনকি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ম্যাচ প্র্যাকটিসেরও একটা জায়গা মনে করেন এই লিগকে, ‘প্রিমিয়ার লিগে সব খেলোয়াড় প্রচণ্ড সিরিয়াস থাকে। এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় আসে। আর্থিকভাবে সবাই লাভবান হয়। এখানে ভালো খেললে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো ছন্দে থাকে।’
প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলার অর্থটাও এখন ভিন্ন তামিমের কাছে। একটা সময় ছিল যখন ৫০-৬০ রান করেই খুশি থাকতেন ব্যাটসম্যানরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের পারফরম্যান্সের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই জায়গাতেও পরিবর্তন চান আবাহনীর অধিনায়ক, ‘গত দেড়-দুই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের ব্যাটসম্যানরা প্রচুর সেঞ্চুরি করছে, ৮০-৯০ রানের ইনিংস খেলছে। এখন লিগে একজন তরুণ খেলোয়াড় ৫০ করলে তারও দায়িত্ব হবে পুরো খেলে আসা।’
তামিমের দৃষ্টিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অবস্থান এতটাই উঁচুতে যে, এই লিগকে তিনি তুলনা করেন কাউন্টি ক্রিকেটের ওয়ানডে আসরের সঙ্গে, ‘কাউন্টির যে ওয়ানডে ক্রিকেট হয়, আমি এটাকে তার চেয়ে কম মনে করি না। অনেক কম সুযোগ-সুবিধা নিয়েও এখানে সবাই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে খেলে। গা ছাড়াভাবে ক্রিকেট খেলার কোনো সুযোগ নেই।’
গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে এবারই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। লিগ নিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের চিন্তা মাশরাফি-তামিমের মতো হলে ঘরোয়া ক্রিকেট ফিরে পেতে পারে হারিয়ে যাওয়া রোমাঞ্চ।