বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশে মানবাধিকারের বড় অন্তরায় হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণগ্রেফতার ও বেআইনি আটকাদেশ, সরকারি বাহিনীর গুম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধকে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বাংলাদেশে গুম, বেআইনি আটকাদেশ, সংখ্যালঘু ও অন্যদের ওপর চালানো উগ্রপন্থীদের হত্যাযজ্ঞ, বাল্যবিয়ে বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং দুর্বল শ্রম অধিকার আইনের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে একটি বহুত্ববাদী সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে বিতর্কিত এবং আন্তর্জাতিক মান অর্জনে ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করেছেন।
তবে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ন আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশের অন্য মানবাধিকার সমস্যাগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার, গণগ্রেফতার, বিচার বিভাগের দুর্বল সামর্থ এবং স্বাধীনতার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে।
এছাড়া পক্ষপাতদুষ্ট দীর্ঘ আটকাদেশ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা, সরকারি দুর্নীতি এবং অনলাইন মাধ্যম ও সংবাদপত্রের ওপর কড়াকাড়ি আরোপকেও মানবাধিকার সংকট হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
মানবাধিকার প্রতিবেদনে, সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর বিরুদ্ধে নাগরিকদের গোপনীয়তার শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি এবং অনানুষ্ঠানিক বাধার মুখে পড়ছে।
প্রতিবন্ধীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, বিশেষ করে সরকারি স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তিতে বৈষম্য হচ্ছে বলেও জানানো হয় এই প্রতিবেদনে।
এছাড়া ধর্মীয় এবং নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর সামাজিক সহিংসতা বাড়ছে এবং লৈঙ্গিক বৈষম্যও বেড়েছে।
মানবাধিকার প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপকহারে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যার ঘটনা তদন্ত করা এবং অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে সরকারের খুবই কম পদক্ষেপ নেয় বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
এমন মানবাধিকার হরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে র্যাবের নিজস্ব তদন্ত সেলের ভূমিকাও ক্ষীণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বা সহযোগিতা করায় পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়টি যৌক্তিক করতে সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রচেষ্টাকে ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ