রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আলাস্কার বৈঠক বিশেষ ফলপ্রসূ হল না। যুদ্ধবিরতির শর্তে ইউক্রেনকে পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। বৈঠকের পর পুতিনের এই প্রস্তাব জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও স্পষ্টভাষায় সে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন জেলেনস্কি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে জানায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যদি পূর্ব দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহার করে তবেই রাশিয়া অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত। বর্তমানে রাশিয়া এই অঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশ ও সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনের ৫ ভাগের একভাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
রয়টর্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার আলাস্কার বৈঠকে পুতিন জানান, যদি ইউক্রেন ডনবাস অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যায়, তাহলে রাশিয়া খেরসন এবং জাপোরিঝিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ থামাবে। সেক্ষেত্রে রুশ সেনাবাহিনী বর্তমানে যেখানে আছে সেখানেই থামবে। বর্তমানে দোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ রুশ সেনার দখলে রয়েছে। জেলেনস্কিকে সে কথা জানিয়ে দেন ট্রাম্প এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। সেইসঙ্গে এটাও জানান, প্রস্তাব না মানলে যুদ্ধবিরতি হতে পারে না।
এদিকে আলাস্কা বৈঠকের শেষে সোশাল মিডিয়ায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘রাশিয়া বড় শক্তিধর রাষ্ট্র, তার তুলনায় ইউক্রেন কিছুই নয়। ফলে আপস করতেই হবে। যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদী হয় না। ফলে এই যুদ্ধ শেষ করতে হলে পাকাপাকি শান্তিচুক্তি প্রয়োজন।’ ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ‘তিনি ও পুতিন জমি হস্তান্তর ও ইউক্রেনকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইউক্রেনের। সেক্ষেত্রে তারা ‘না’ বলতেই পারে।’
এদিকে জেলেনস্কি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, সাংবিধানিক পরিবর্তন ছাড়া ইউক্রেন কোনও ভূখণ্ড ছাড়া হবে না। তিনি দোনেৎস্ক শহর স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাটোর্ককে রাশিয়ার যুদ্ধ সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের দুর্গ বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের সাথে আলোচনার পর তিনি বলেন, ”নিরাপত্তা গ্যারান্টি সম্পর্কে আমেরিকার কাছ থেকে ‘ইতিবাচক সংকেত’ পাওয়া গিয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে কেবল সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং একটি স্থায়ী শান্তি হওয়া উচিত।”
এই পরিস্থিতির মাঝেই জেলেনস্কি জানিয়েছেন সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন তিনি। অন্যদিকে কিয়েভের ইউরোপীয় বন্ধুরা ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে ইউক্রেনকে সমর্থন এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূত্রের খবর, সোমবারের আলোচনায় যোগদানের জন্য ইউরোপীয় নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠককে তাঁদের তরফে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতেও কোনও বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। কিছু ইউরোপীয় নেতা ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককে পুতিনের জন্য ‘১-০’ জয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে ইউক্রেন কোনও সুনির্দিষ্ট সুবিধা পায়নি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার লক্ষ্যে অনেকটা পথ এগোনো গিয়েছে। তবে রাশিয়ার উপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন অনলাইন