বাংলা৭১নিউজ, আজমল হক হেলাল: মাধবী হঠাৎ কোথা থেকে এলো ফাগুন-দিনের স্রোতে, এসে হেসেই বলে ‘যাই যাই যাই’। কাষ্ঠলতা, ছড়ান, পত্রনিবিড়, শীতে পাতা ঝরায়। পাতা ভল্লাকার, ১০-১৬ সেমি. লম্বা, চার্ম, বিন্যাস বিপ্রতীপ। ফুল বসন্তের বার্তাবহ।
প্রায় নিষ্পত্র ডাল ভরে থোকা থোকা সুগন্ধি সাদাটে প্রায় ৩ সেমি. লম্বা ফুল ফোটে। পাপড়ি সংখ্যা ৫, ৪টি সমান ও সাদা, ১টি ছোট ও হলুদ। ভারি সুগন্ধি, ভ্রমরাও উতলা হয়। বনে আপনিতেই জন্মায়। শুকনো ফলগুলো ভারি মজার-তিনটি পাখা মেলে দিব্যি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।
মাধবী নিয়ে রবীন্দ্রনাথের গান কবিতা থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি মাধবিকা হোক সুরভি সোহাগে মধুপের মনোহরা।বসন্তের জয়রবে, দিগন্ত কাঁপিল যবে মাধবী করিল তার সজ্জা।মাধবী সহসা তার সঁপি দিল উপহার, রূপ তার, মধু তার গন্ধ। জনপ্রিয় ইন্ডিয়ান আধুনিক গানের একটি কলি আছে, মাধবী ফুটেছে ওই, তারা সব জেগেছে ওই আমি কি তোমার নই।
আজ সোমবার ঋতু রাজ বসন্ত শুরু। পহেলা ফালগুন। আগাম াতা নিয়ে বনে ফুটেছে অনেক ফুল। গতকাল শীতের ঋতুর শেষ দিন। রমনায় ফুটেছে মাধবী ফুল। দক্ষিনা হালকা হাওয়ায় দুলছে মাধবী লতা। আর ফুলে বসছে কালো ভোমার।সবুজ-শ্যামলের মাঝে ইট ফাথর আর কক্রিটে রমনা পার্কে এক পাশ ঘেঁষে বুনোফুল, ঝোপঝাড, পরিচিত ঘাসফুল।
তারই মাঝে ফুটেছে মধবী ফুল।মাধবী বা মাধবীলতার অনেক নাম- মন্ডপ, কামী, পুষ্পেন্দ্র, অভীষ্টগন্ধক, অতিমুক্ত, বিমুক্ত, কামুক ও ভ্রমরোৎসব। মাধবীর বোটানিক্যাল নাম Hiptage benghalensis (L.) Kurz., d¨vwgwj Malpighiaceae। এসব নাম মাধবীর ভাব প্রকাশে ব্যবহার হয় এবং কাব্যরসে ভরপুর। মাধুরীলতার হিন্দি নাম রঙ্গন-কা-বেল, বোম্বে অঞ্চলে বারমাসী, লাল চামেলী। কুঞ্জ তৈরির জন্যে মাধুরীলতা আদর্শ গাছ। এর আদি বাসস্থান দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দো-মালয়েশিয়া।
মাধুরীলতা লতানো গাছ। এর বোটানিক্যাল নাম Quisqualis indica, ফ্যামিলি Combretaceae। লতা বেশ শক্ত, কযয়েক বছর পর মোটা হয়। মাধুরীলতার ফুল গন্ধে ভরপুর। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, সাদা-লাল-কমলা রঙে মেশানো। পাপড়ি ৫ টি। ফুলের রঙ সাদা থেকে ধীরে ধীরে বদল হয়।
রঙের জন্যও এই ফুল খুব সুন্দও মাধবী লতা সুন্দরীতমা চিরযুবতী মাধবীর রূপ-গুণ-সৌরভ কিছুরই অভাব নেই। কোনো মোক্ষম বিশেষণই তার উপযুক্ত নয়। কোনো একটি নামেই তার রূপ-গুণ সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় না।মাধবীলতার বহুবিধ ভেষজ গুণও রয়েছে। পাতা চর্মরোগে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস খোস-পাঁচড়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পাতা পুরনো বাত ও হাঁপানীর শান্তিকারক। বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, বাংলা একাডেমী ও কার্জন হলের বাগানে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ও ধর্মাজিক বৌদ্ধ বিহারে মাধবীলতা রয়েছে।মাধবীরা দুর্লভ। মাধবীরা হারিয়ে যাচ্ছে অনাদরে, অবহেলায়। এখন শৌখিন ও সৌন্দর্যপিপাসু ছাড়া মাধবীদের কেউ মনে করে না। মাধবী তাই যাকে ধরা দেয় শুধু তাকেই আকুল করা সুখ-সম্ভোগ দিতে রাজি হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এএইচ