বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন ও মেধাশূন্য করতে হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের৷ তাঁরা এক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যা আজ তাঁদের সন্তানরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান৷
শহিদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের ছেলে সাংবাদিক শাহীন রেজানুর হতাশ নন৷ তিনি মনে করেন, অনেক পাথর আর বাধা সরিয়ে আবার বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পারেনি অপশক্তি৷ তাই বাংলাদেশ ইতিহাসের সঠিক পথেই এখন হাঁটছে৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শহিদ বুদ্ধিজীবীরা এক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং শোষনমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন৷ কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় এবং বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর এই দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা মন্ত্রী হয়৷ ঘাতকরা ক্ষমতায় আসে৷ আর আমরা শহিদদের সন্তানরা হতাশায় নিমজ্জিত হই৷ কিন্তু ইতিহাস তার পথ খুঁজে নেয়৷ অনেক চাপ আর ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বাংলাদেশে অবশেষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বিচার চলছেও৷ এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন৷”
‘‘তবে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত এবং শোষনমুক্ত বাংলাদেশের জন্য আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে৷ আমি হতাশ নই৷ কারণ সামনে আলো আছে৷ আমাদের সময় লাগবে৷ কিন্তু আমরা এগিয়ে যাব” – এই বিশ্বাস শাহীন রেজানুরের৷
শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. এএফএম আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী৷ তিনি আজকের বাংলাদেশকে দেখেন দু’ভাবে৷ প্রথমত, তিনি মনে করেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে৷ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের বড় অর্জন৷ একটা সময় দেশ স্বাধীনতাবিরোধীরা দখল করে নিলেও, আবার তা মুক্ত হয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে৷ কিন্তু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনও সফল হয়নি৷
তিনি বলেন, ‘‘শহিদ বুদ্ধিজীবীরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাইতেন তা অর্জন করতে আরো অনেক সময় লাগবে৷ আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক করা হয়েছে৷ এখনও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো সক্রিয়৷ এখনও দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখি৷ অর্থনৈতিক শোষণ এখনো বিদ্যমান৷ তবে এরপরেও আমি হতাশ নই৷ আমার মনে হয় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি৷”
শহিদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার সন্তান শমী কায়সার মনে করেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি যাত্রা শুরু হয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে৷ তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে৷ তারা তাদের মতো করে মুক্তিযুদ্ধকে দেখছে৷ তারা সঠিক ইতিহাস জানছে৷ বঙ্গবন্ধুকে জানছে৷ অনেকে ভাবতেই পারত না যে এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে৷ অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এই বিচার বন্ধে৷ কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এটা সম্ভব করেছেন৷ আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ৷”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্য যে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও আসেনি৷ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এখনও আছে৷ কিন্তু আমরা এগোচ্ছি৷ অনেক কিছু এখনো অর্জনের বাকি৷ কিন্তু এখন আশাবাদী আমাদের হবে৷”
সুমন জাহিদ শহিদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভিনের ছেলে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের, মানে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের একটি সংগঠন আছে, যার নাম ‘প্রজন্ম একাত্তর’৷ এই সংগঠনের একটা স্লোগান আছে – তোমাদের যা বলার ছিল বলেছে কি তা বাংলাদেশ? শহিদ বুদ্ধিজীবীরা যা চেয়েছেন তা আজও এই বাংলাদেশে হয়নি৷ এখনো দেশে হানাহানি, অশান্তি, সাম্প্রদায়িকতা৷ আমরা চাই দলীয় স্লোগানে শহিদদের যেন আটকে রাখা না হয়৷ তাঁদের চিন্তা, তাঁদের চেতনা এবং আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে৷”
বাংলা৭১নিউজ/সংগৃহিত:ডয়চে ভেলে/এসএইচবি