রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
পরিবহন ধর্মঘটে যানশূন্য সড়কে দুর্ভোগ চরমে আপিল বিভাগের ২ বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ: প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার মে দিবসে সমাবেশ করবে বিএনপি বান্দরবানে ২ কেএনএফ সদস্যের মরদেহ! কালো চশমা পরা বিএনপি নেতারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে লড়বেন ৬০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন সুন্দরী ফের শেষ মুহূর্তের গোলে অপরাজিত থাকলো লেভারকুসেন নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২ আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউপিতে প্রথমবারের মতো ভোটগ্রহণ শেখ জামালের জন্মদিন আজ কম্বোডিয়ায় সেনাঘাঁটিতে বিস্ফোরণে ২০ সেনা নিহত সরকার আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলায় অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা চীনে টর্নেডোর তাণ্ডবে নিহত ৫ থেমে থাকা ট্রাকের পেছনে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ৩ মালয়েশিয়ায় ১৩২ বাংলাদেশি গ্রেফতার ডুমুরিয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ৭ নদী জাপানে শক্তিশালী ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুই নার্সের স্মৃতিচারণা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে
মমতাজ বেগম

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মমতাজ বেগম ও জাহানারা বেগম দুই বোন। বরিশালের মুলাদী থানায় মেয়েদের মধ্যে তারাই প্রথম ম্যাট্রিক পাস করেছেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিংয়ে। দুজনেরই সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়ার। এখন তারা সপরিবার বাস করছেন রাজধানীর কলাবাগানে। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল দুজনেরই। তারা লিখেছেন মহান এই নেতার কিছু স্মৃতি

আমার দেয়া কবুতরই উড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: জাহানারা বেগম

আমি যখন ঢাকা মেডিকেলে নার্সিংয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়ি তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। স্বাধীনতার কয়েক বছর আগের কথা। তখন খুব আন্দোলন চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে কয়েক দিন পরপর জেলে নেয়া হয়। জেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। তখন আমার ডিউটি ছিল সেখানে। হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনিতো রাজবন্দী, আপনাকে তো জেলে ভালোভাবেই রাখা হয়। এমন অসুস্থ হয়ে পড়লেন কিভাবে? বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমরাতো মনে করো আমাকে কোনো কষ্ট দেয়া হয় না। কিন্তু এমনটা নয়, বরফের উপর আমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ছোট্ট একটি রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে। মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে।’

৭ মার্চের ভাষণ সরাসরি শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তখন আমি পিজি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে চাকরি করি। আমরা দল বেঁধে গিয়েছিলাম ভাষণ শুনতে। মেয়েদের সামনে বসতে দেয়া হয়েছিল। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভাষণ শুনেছি। শরীরের লোম খাড়া হয়ে গিয়েছে জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে। আমি শুনছি আর অবাক হচ্ছি। কিভাবে সম্ভব কোনো কিছু না দেখে এত নিখুঁতভাবে ভাষণ দেয়া! মুক্তিযুদ্ধের সব দিকনির্দেশনাই ছিল সে ভাষণে।

বঙ্গবন্ধুকে যখন বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলো তখন মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলে আমি সাতটি জীবন মুক্ত করবো’। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরে এলেন মনে হলো স্বাধীনতা যেন পূর্ণতা পেল। আমি অসুস্থ থাকায় আমার স্বামীর হাতে সাতটি কবুতর তুলে দিয়ে বলেছিলাম, তুমি চেষ্টা করো এ কবুতগুলো বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতে। আমার ইচ্ছা তিনি নিজ হাতে কবুতরগুলো মুক্ত করুক। রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেদিন বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মুক্ত করেছিলেন কবুতরগুলো।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দেখতে পিজি হাসপাতালে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তখন আমার ডিউটি ছিল কাজী নজরুল ইসলামের কেবিনে। বঙ্গবন্ধু পরম মমতায় তাঁর শারীরিক খোঁজখবর নিলেন। আমাদের চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলেন কবির শারীরিক অবস্থার কথা। কী অমায়িক তাঁর ব্যবহার!

এখনো তাঁর কথা মনে হলে চোখ ছলছল করে ওঠে। এত আপনভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতেন তিনি, যার কোনো তুলনা হয় না।

বঙ্গবন্ধুকে যেদিন খুন করা হলো আমার মনে হলো সেদিন কোনো পাখি ডাকেনি। কোনো বাতাস বহেনি। স্তব্ধ হয়ে গেছে চারিপাশ, কোনো আওয়াজ নেই। কোনো গাড়ির শব্দ নেই। এমন নিঝুম, মনে হলো যেন সব থমকে দাঁড়িয়েছে। একটা পাতাও যেন নড়ছে না। দেশের জন্য এত কিছু করার পরও যারা তাকে মারতে পারে তারা মানুষ নয়। তাদের আমি মানুষ বলবো না। কোনো মানুষ তার ওপর আঘাত হানতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে খাবার তুলে দিলেন: মমতাজ বেগম

স্বাধীনতার আগের কথা। আমাদের এক আত্মীয় ঝমু ভাই বঙ্গবন্ধুর ট্রাক চালাতেন। ঝমু ভাই বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কথা জানিয়েছিলেন যে, আমার দুই বোন ঢাকা মেডিকেলে নার্সিংয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শুনে বলেছিলেন, একদিন বাসায় নিয়ে এসো। বাবা কোরবানির ঈদে ছোটভাই ও আমাকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন।

আমাদের দেখে বঙ্গবন্ধু তার বোনকে বললেন, তাড়াতাড়ি রান্না করো। রান্না হওয়ার পর তিনি নিজ হাতে আমাদের খাবার তুলে দেন। ছোটভাইয়ের পাতে মাংসের টুকরো দিতে দিতে বলেন ‘এখনই তো খাবার সময়, নেও ভালো করে খাও’। আমি অবাক হয়ে রইলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেখা দিয়েছেন এটাইতো যথেষ্ট, তার ওপর এমন আপ্যায়ন!

আরেকদিনের কথা। আমি বাবা আর ছোটভাই মোশাররফ রমনা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। সম্ভবত দোয়েল চত্বর এলাকা। হঠাৎ সামনে একটি গাড়ি থামলো। দেখলাম গাড়ির ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধু নামছেন। তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছেন? বাবা বললেন, মেয়েকে পার্কটি একটু ঘুরিয়ে দেখাবো। বঙ্গবন্ধু তখন বাবাকে বললেন, এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, পার্কে যাওয়া ঠিক হবে না। এরপর গাড়িতে করে আমাদের নামিয়ে দিলেন মেডিকেলের হোস্টেলে। আমরা কোন ‘নব্যা ছব্যা’, একদিন বাসায় গিয়েছি সেটা মনে না রাখলে তাঁর কী হতো! দেখে আবার চিনলেন, কত বড় উদার নেতা ছিলেন তিনি!

বাংলা৭১নিউজ/সিএইস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com