মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকায় সড়ক নির্মাণ ভরিতে আরও ৪২০ টাকা কমলো সোনার দাম পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ শহরের নিম্নমধ্যবিত্তদের গৃহ নির্মাণে ৩১৮৪ কোটি দেবে আইডিবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা সরকার ও রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্তে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এরশাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি: জি এম কাদের শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন ফারুক বাস মালিকদের সুবিধা দিতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে হজ ভিসা আবেদনের সময় বাড়ল ৭ মে পর্যন্ত আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ছুটিই থাকছে স্কুল-মাদরাসা তিউনিশিয়ান কেমিক্যাল গ্রুপের সঙ্গে বিএডিসির চুক্তি সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে শ্রম আইন আফগানিস্তানে মসজিদে বন্দুক হামলা, নিহত ৬ শাড়ি পরেই লোকটিকে বেধড়ক মারধর করি: লারা দত্ত ব্যবসায়ী সাবের হত্যার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ৬ বুধবার থেকে কমতে পারে তাপমাত্রা শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না, মানবেতর জীবনযাপন করছে : ফখরুল খায়রুল কবির খোকনের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই লেভানডোফস্কির হ্যাটট্রিকে বার্সেলোনার জয়

চাটমোহর শাহী মসজিদ: মুসলিম স্থাপত্য শৈলী’র অপরূপ নিদর্শন

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮
  • ৩১৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, আফতাব হোসেন, চাটমোহর (পাবন)প্রতিনিধি: প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ দেশের অমূল্য সম্পদ। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল ঘুরলেই চোখে পড়বে এসব প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন। বহু বছর পরেও তাঁর অবকাঠামোসহ নির্মাণ শৈলী আধুনিক প্রত্ম শৈলীকে হার মানায়। বিশেষতঃ তখনকার সমাজ-সংস্কৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। যে সময়ে ঐ সব নিদর্শন তৈরী হয়েছিল তখনকার সমাজ এতটা শিক্ষিত ছিল না, সহজলভ্য ছিল না এর নির্মাণ শিল্পী ও নির্মাণ সামগ্রী। এর জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ও তা ব্যয়ের মানসিকতার বিষয়টি ভাবনার।

কিন্তু এসব রুচিশীল প্রত্ম নিদর্শন আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তা নিয়ে অনেক কিছু ভাববার আছে। ঐ সময়ের মানুষ ও মানসিকতার বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করলে নতুন কোন ইতিহাস পাওয়া যাবে যা আমাদের জনপদের মানুষের ইতিহাসকে এগিয়ে নিবে দূর থেকে দূরে। এসব স্থাপত্য শৈলীর অপরূপ নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও কোন ইতিহাস এই সব নিদর্শনকে কেন্দ্র করে স্বাতন্ত্র ভাবে গড়ে উঠেনি। বরং প্রত্যেকটি প্রত্মনিদর্শনই অযত্ম অবহেলার নির্মম সাক্ষী। এমনি একটি প্রাচীন নিদর্শন পাবনার চাটমোহর উপজেলার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ।

মসজিদ গেটে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন মিনার।  অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের চলনবিলের ইতিকথা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সম্রাট আকবরের শাসনামলে সৈয়দ আবুল ফতে মোহাম্মদ মাসুম খাঁর অর্থায়নে তারই সহোদর খাঁন মোহাম্মদ কাকশাল কর্তৃক ১৫৮১ খৃষ্টাব্দে চাটমোহরে মাসুম খাঁ কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। সৈয়দ আবুল ফতে মোহাম্মদ মাসুম খাঁ সম্বন্ধে জানা যায়, তিনি দিলির সম্রাট আকবরের অধীনে ৫ হাজার সৈন্যের অধিনায়ক ছিলেন। তার পূর্ব পুরুষ সুলতান হুসেন শাহের রাজত্ব কালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল হতে এসেছিলেন। পরবর্তী সময়ে চাটমোহরে বসতি স্থাপন করেন।
১৫৫৫ খৃষ্টাব্দে এখানেই সৈয়দ আবুল ফতে মোহাম্মদ মাসুম খাঁ’র জন্ম। তার পূর্ব পুরুষরা খোরাসানের তুরাবর্তী বংশের কাকশাল গোত্রের সৈয়দ ছিলেন। মাসুম খাঁর চাচা আজিজ মোহাম্মদ মাসুম খাঁ ২০ বছর বয়সে ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের সৈন্য দলে যোগদান করেন। যুবক মাসুম খাঁ কালা পাহাড় নামক শত্রু সৈন্যের অধিনায়ককে যুদ্ধে পরাজিত করে স্বীয় দক্ষতার গুণে পাঁচ হাজারী মনসবদার পদে উন্নীত হন। ইসলাম ধর্মের উপর সম্রাট আকবরের নিষ্ঠা ছিল না মনে করে কাকশাল গোত্র ও বাংলার বারো ভূইয়ারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৫৭৯ সালে মাসুম খাঁ বারো ভূইয়াদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বারো ভূইয়াদের দলে যোগদান করেন। কিন্তু সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি ও গভর্নর শাহবাজ খাঁনের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি শীতলক্ষার তীরে ভাওয়ালের গভীর অরণ্যে আত্মগোপন করেন। সেখানেই বাদশাই ফৌজের সঙ্গে পূণঃযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসময় ৪৪ বছর বয়সে ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে ফৌজি বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে মৃত্যু বরণ করেন। সৈয়দ আবুল ফতে মোহাম্মদ মাসুম খাঁ সম্রাট আকবরের অধীনতা অস্বীকার করে চাটমোহর স্বাধীন ক্ষমতা পরিচালনা কালীন সময়ে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তখন থেকেই মসজিদটি মাসুম খাঁর মসজিদ নামে পরিচিত।
চাটমোহর শাহী মসজিদটির ভেতরে দৈর্ঘ্য ৩২ হাত, প্রস্থ ৯ হাত, উচ্চতা প্রায় ২০ হাত। ক্ষুদ্র পাতলা নকশা খঁচিত লাল জাফরী ইটে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালটি সাড়ে চার হাত প্রশস্থ। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির সামনে কলেমা তৈয়বা লিখিত একখন্ড কালো পাথর এখনো প্রথিত রয়েছে। মসজিদটিতে এক খন্ড কৃষ্ণপ্রস্তরের এক পাশে ফারসি ভাষায় নির্মাণের ইতিহাস এবং অপর পাশে ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও শিবের মূর্তি অংকিত ছিলো। প্রস্তর খন্ডটি বর্তমানে রাজশাহী বরেন্দ্র মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। মসজিদটি প্রায় ধ্বংস হবার প্রাক্কালে ১৯০৪ সালে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর অধিগ্রহণ করে নেয়। মূল কাঠামো অবিকল রেখে অধিদপ্তর থেকে দফায় দফায় সংস্কার করা হয়েছে মসজিদটি। এখন মসজিদটি তার অতীত সৌন্দর্য অনেকটাই ফিরে পেয়েছে। আবার সামনে নির্মিতব্য বিশাল মিনার মসজিদের দৃষ্টিনন্দতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
পদাধিকার বলে মসজিদটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের কেয়ার টেকার শাজাহান রয়েছেন দেখভালের দায়িত্বে। কমে গেলেও এখনো মসজিদটিতে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা মানত দিয়ে যান। মসজিদটির লাগোয়া ডানপাশে আছে এক বুজুর্গ ব্যক্তির কবর। মসজিদের নামে আছে জমি। মসজিদের আয় বৃদ্ধির লক্ষে সম্প্রতি মহিলা ডিগ্রি কলেজ সড়কে সেই জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক জমি নিয়ে চলছে ঝামেলা। শিক্ষক মাওলানা ইসমাইল হোসেন ছিলেন পেশ ইমাম। মসজিদটিতে পেশ ইমাম ও ওয়াক্তি ইমাম হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন হাফেজ প্রভাষক কাজী আব্দুস সালাম মাসুদ।

মসজিদটির সৌন্দর্য এখনো মানুষকে বিমোহিত করে। বহু পর্যটক আসেন সম্রাট আকবরের স্মৃতি বিজরিত প্রায় সাড়ে চার’ বছরের মাসুম খাঁ কাবলির (শাহী মসজিদ) মসজিদটি দেখতে। যা এখনো চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ঈদের দু’টি জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রত্মতত্ত্ব সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ আছে বলে কার্যক্রম দেখে মনে হয় না। গত ২০১২ সালে মসজিদটির সম্মুখে প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মিনার নির্মাণ শুরু হয়ে সেটি এখনো নির্মাণাধীন

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com