পশ্চিমবঙ্গ ভোট পর্বের তৃতীয় দিনে আগের মতো না হলেও বেশ কিছু জায়গায় গন্ডগোল ভালোই হলো। সব মিলিয়ে অবস্থা কিছুটা উন্নতি চোখে পড়েছে।
এই প্রথম কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীকে ভোট লুট ঠেকাতে কিছুটা সক্রিয় হতে দেখা গেল। বীরভূমের কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) কর্মী-সমর্থকেরা জাল ভোট দিতে বাধা পেয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রথমে বচসা, পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় এবার বিরোধী দলগুলো কিছুটা হলেও খুশি।
এই পর্বে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা—এই ছয় জেলায় ভোট গ্রহণ হলেও সবার নজর ছিল বীরভূমের দিকে। বীরভূম জেলার টিএমসি সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখন যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে। মাত্র দুই দিন আগে নির্বাচন কমিশন অনুব্রতকে নজরবন্দী করার নির্দেশ দেন। বলা হয়, একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সারাক্ষণ অনুব্রতের সঙ্গে থাকবেন, তাঁর চলাফেরা-কাজকর্ম ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করা হবে। কিন্তু গতকাল অনুব্রত নির্বাচন কমিশনকে উপেক্ষা করে বীরভূম জেলার নানুর, সুরি, রামপুরহাট, ইলাম বাজার, সাঁথিয়া প্রভৃতি জায়গায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের সময় অনুব্রত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় ভিতরে কী কথা হয়েছে জানতে বা দেখতে পারেনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ভিডিওগ্রাফার। ম্যাজিস্ট্রেট এ নিয়ে বাধা দিতে চেষ্টা করলেও অনুব্রত পাত্তা দেননি। গতকাল ভোটের দিন অনুব্রতকে দেখা গেল ম্যাজিস্ট্রেট পাহারা ছাড়াই বোলপুর শহরে নিজের পাড়া নিচুপাত্তিতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে। তিনি যে জামা পরেছিলেন, তার বুকে টিএমসির নির্বাচনী প্রতীক লাগানো, যা পরে বুথে ঢোকা যায় না। বিরোধী এজেন্ট-শূন্য ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অনুব্রতকে বাধা দিতে সাহস পাননি। পরে নিজের পার্টি অফিসে বসে অনুব্রত গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমাকে নজরবন্দী করার ক্ষমতা কারও নেই।’
তবে অনুব্রত যতই তর্জন-গর্জন করুন, বীরভূমে এবার ভোট কিন্তু ২০১৪ সালের মতো একতরফা বলে মনে হচ্ছে না। গতবার টিএমসি গায়ের জোরে জেলার বেশির ভাগ বুথ থেকে বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে একচেটিয়া জাল ভোট দিয়েছিল। এবারও আগের রাতে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের লোকজন হুমকি দেন। ফলে কিছু মানুষ ভয়ে ভোট দিতে যাননি। বেশির ভাগ জায়গাতেই প্রচুর মানুষকে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। শান্তিনিকেতন থেকে বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপক বলেন, চারপাশের গ্রামে ২০১৪ সালে বুথে ভিড় চোখে পড়েনি। এবার অনেক মানুষ ভোট দিচ্ছেন। বামপন্থীরা বীরভূমের ভোট দেখে অখুশি নন।
বীরভূম ছাড়া উত্তরবঙ্গের সাত জেলায় ভোটে তেমন বড় গন্ডগোল হয়নি। এরই মধ্যে মালদার ইংলিশ বাজার কেন্দ্রে কয়েকটি বুথে তৃণমূল এজেন্ট দিতে পারেনি। সম্ভবত কংগ্রেস দলের হুমকিতে। শিলিগুড়িতে তৃণমূলের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ঝগড়া থেকে সংঘর্ষ হয়। সব জেলা ধরে গড়ে ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশ।