বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বিতর্কিত ‘সিডিশন ল’ বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করা হবে, দেশের প্রধান বিরোধী দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে।
ব্রিটিশ আমলের এই আইনটি গত কয়েক বছর ধরে ভারতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে – বর্তমান বিজেপি সরকার যেমন, তার আগে কংগ্রেস সরকারও এই ‘সিডিশন ল’ বারে বারেই প্রয়োগ করেছে।
বিজেপি এখন বলছে, এই আইন যারা বাতিল করতে চান তাদের ভারতে ভোট চাওয়ারই কোনও অধিকার নেই।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য এই আইন বাতিলে কংগ্রেসের ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২৪(এ) ধারাটিই সাধারণভাবে ‘সিডিশন ল’ নামে পরিচিত – যা ভারতে চালু আছে সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে।
কংগ্রেস বা বিজেপি, দেশে যারাই ক্ষমতায় থাকুক, এই আইনটি প্রয়োগ করেছে সব দলই।
কিন্তু রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস এখন কথা দিচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে এই বিতর্কিত আইনটি বিলুপ্ত হবে।
সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল বলছিলেন, “যে কোনও একজন ব্যক্তির চেয়ে রাষ্ট্র অনেক বেশি ক্ষমতাশালী, একা একজনের হাতে রাষ্ট্রকে উৎখাত করার কোনও ক্ষমতাই থাকতে পারে না। সিডিশন ল-ও কিন্তু ঠিক এই কথাটাই বলে।”
“তারপরও আমরা দেখছি সরকারের বিরুদ্ধে কেউ একটা টুইট করলে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও তার বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারগুলো এই আইনের অপব্যবহার করেই চলেছে।”
এই অপব্যবহার ঠেকাতেই কংগ্রেস এখন চায়, গোটা আইনটিই তুলে দেওয়া হোক।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, বিজেপি বা কংগ্রেস কোনও সরকারই আসলে এই আইনটিকে ‘প্রকৃত স্পিরিটে’ ব্যবহার করতে পারেনি।
তার কথায়, “ভারতে আমরা প্রথম এই আইনটির উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ লক্ষ্য করি যখন কংগ্রেস আমলে মাওবাদীদের সহায়তার অভিযোগে ড: বিনায়ক সেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকেই ভারতে এই আইনটির ব্যবহার একেবারে এক্সপোনেন্সিয়ালি বেড়ে গেছে!”
“ওই বিনায়ক সেন মামলাতেই কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলেছিল, রাষ্ট্রের সঙ্গে কারো একটা আদর্শগত বিরোধ হলেই কিন্তু সেটা সিডিশন হয় না।”
“এটা দেখাতে হবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও হিংসায় মদত দিচ্ছেন, কিংবা কোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন – তখনই কেবল সিডিশনের চার্জ আনা যাবে।”
“কিন্তু এই স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও আমরা বারে বারেই দেখছি সরকারের যে কোনও সমালোচনাতেই ঢালাওভাবে সিডিশন ল’র প্রয়োগ করা হচ্ছে,” বলছিলেন মিস গাঙ্গুলি।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই দেশদ্রোহ আইন ব্যবহার করেছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার বা উমর খালিদদের বিরুদ্ধে।
দেশের বিভিন্ন শহরে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে – যাদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘আরবান নকশাল’ বা ‘শহুরে মাওবাদী’ হিসেবে।
এদিকে কংগ্রেস তাদের ইশতেহারে এই ঘোষণা করার পরই এই আইন বাতিলের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিজেপি নেতা ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
তিনি বলছেন, “কংগ্রেস চাইছে দেশদ্রোহ করা এখন থেকে আর অপরাধ বলে গণ্য হবে না!”
“পণ্ডিত নেহরু, ইন্দিরাজী, রাজীব গান্ধী বা মনমোহন সিং পর্যন্ত যে আইন ছোঁয়ার সাহস পাননি, আজ কংগ্রেসের নতুন নেতৃত্বে জেহাদি আর মাওবাদীদের ফাঁদে পা দিয়ে বলছেন – তারা না কি নেই আইনটাই তুলে দেবেন।”
“যারা এ ধরনের কথা বলে তাদের এ দেশের একটিও ভোট পাওয়ার হক নেই!” মন্তব্য করেছেন মি. জেটলি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও সেই সঙ্গে যোগ করছেন, “আজ কংগ্রেস সিডিশন ল বাতিল করার কথা বলছে – একদিন তারাই কিন্তু সন্ত্রাস-বিরোধী ‘টাডা’ বা ‘পোটা’র মতো আইন বাতিল করেছিল।”
“মনে রাখতে হবে, কংগ্রেসের জন্যই কিন্তু এই ধরনের অপরাধে জামিনটা স্বাভাবিক, জেল বা কারাদণ্ড ব্যতিক্রমে পরিণত হয়েছে।”
ভারতে এই নির্বাচনী মৌসুমে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা ও তারপর পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের অভিযানের পর থেকেই দেশপ্রেমের ন্যারেটিভ নিয়ে জোরালো বিতর্ক চলছে – আর তাতেই এখন আরও বেশি করে ইন্ধন যোগাচ্ছে এই রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিলের প্রস্তাব।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা