শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যৌতুকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির সভা রাশিয়ায় অভিবাসী হোস্টেলে আগুন, নিহত অন্তত ৮ পারিবারিক সম্পদে বোনদের অধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ ভূমিমন্ত্রীর লালমনিরহাট রেলওয়ের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান বান্দরবানে কুকি-চিনের দুই সদস্য নিহত জোটের শরিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী ১২০ কি.মি গতিতে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল ১১ দফা দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নৌযান শ্রমিকদের ডিবি কার্যালয়ে কলকাতার তদন্ত সংশ্লিষ্ট স্পেশাল টিম ঋণের চাপে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেন আলী হোসেন চূড়ান্ত হচ্ছে নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতি অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে কাজ করছে সরকার : প্রতিমন্ত্রী বিএনপি ষড়যন্ত্র নির্ভর দল: নানক সহকারী কর কমিশনারের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলা গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার কাজ করা হচ্ছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী আনারের খুনিদের প্রায় চিহ্নিত করে ফেলেছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণ ছাড়া এককভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় : তাজুল ইসলাম এমপি আনার হত্যার তদন্তে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলেও কিছু জায়গায় বৃষ্টির আভাস চার্জার লাইটের ভেতরে ৫ কোটি টাকার সোনা, ২ বিদেশি গ্রেপ্তার

আগুনমুখা কেড়ে নিচ্ছে সব

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮
  • ২৩৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, এম.নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে আগুনমুখায় স্রোত বাড়লে, ভাঙনের তিব্রতাও বাড়ে। কিন্তু কমছে ভূখ-ের আয়তন। ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে কেউ হচ্ছে ভূমিহীন, কেউবা নি:স্ব। এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে তারা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তখন সব হারিয়ে আবারও হচ্ছে সর্বশান্ত।

এরমধ্যেও যারা টিকে আছে, বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ায় তারাও জোয়ারে ডুবছে আর ভাটায় ভাসছে। প্রতিনিয়ত তাদের আর্তনাদে এখানকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে রয়েছে। অথচ তাদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না। সরেজমিনে ভাঙন কবলিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। একসময় এখানে অসংখ্য বসতি ছিল। মানুষের কোলাহল ছিল। শিশুদের কান্না ছিল। আনন্দ উৎসবের বন্যা ছিল। আর আজ? চারদিকে শুধু পানি আর পানি। সবই কেড়ে নিয়েছে রাক্ষুসে আগুনমুখা নদী। আর এর সঙ্গে কেউ হয়েছেন নি:স্ব। কেউ সব হারিয়ে ভিখারি।

জমি-জমার মালিক একরাতেই হয়ে গেছেন দিনমজুর। এদের মধ্যে কেউ উঁচু জায়গায় গিয়ে বসতি গড়েছেন, কেউ আবার নিজ এই জন্মভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উত্তর চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা পলি বেগম (৪০)। স্বামী দুদা মুফতি, পেশায় ক্ষুদ্র  জেলে। ছেলে-মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। এরআগেও দুইবার ভাঙনে তার ভিটেবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। নতুন করে সংসার গোছানো শুরু করতে না করতেই আবারও ভাঙনের মুখে। এ প্রতিবেদকরে কথা হয় পলি বেগমের সঙ্গে।

পলি বেগম বলেন, ‘দিনে জোয়ার যেইসময় আয়, বাচ্চা-গাচ্চা নিয়া রাস্তায় থাহি। আবার ভাডায় (ভাটায়) ঘরে আই। আবার রাত্রে জোয়ার আইলে আমরা ঘুমাই না, জাইগা ( জেগে) থাহি। কহন যে ঘরডা নদীতে ভাসাইয়া লইয়া যায়, হেই চিন্তায় থাহি। আমাগোরে বাঁচান।’

পলি বেগমের প্রতিবেশী ছিল আলমগির মুন্সি (৬৫)। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তার ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন তিনি মূল ভূখ-ে গিয়ে ঝুঁপরি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। এসময় আলমগিরের সঙ্গেও কথা হয়। কান্না জড়িত কন্ঠে আলমগির বলেন, ‘সর্বনাশা নদীতে আমার ভিটাবাড়ি নিয়া গ্যাছে (গেছে)। আমার সাজানো সংসার শ্যাষ (শেষ)। কি করে যে এহন সংসার করমু, হের (তার) কোন কুল কিনারা পাই না।’স্থানীয়রা জানায়, আগুনমুখা নদীর ভাঙনের তিব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ওই ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়া গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবার বসত ভিটেবাড়ি হারিয়েছে। এ ক’দিনে  ওইসব গ্রামের পাঁচ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই জোয়ারের সময় গ্রামগুলোর বসত বাড়িঘর ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমজেদ হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় দুই সপ্তাহে চারটি গ্রামে জোয়ারের পানি উঠে ২০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে আছে। এরমধ্যে ১০ হেক্টর জমির বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই চার গ্রামে ভাঙনে বসত ভিটেবাড়ি হারানো মানুষগুলো উঁচু স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করেছে। কেউ এলাকা ছেড়েই অন্যত্র চলে গেছে। এছাড়াও এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এখন ভাঙনের মুখে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে নদী তীরবর্তী মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কেউ আবার ঘর সরিয়ে উঁচু জাগায় নিয়ে গেছে। অপরদিকে মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামে অবস্থিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রটি যেকোন মুহূর্তে নদীতে গ্রাস করে নিতে পারে। এটিও ভাঙনের মুখে রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছে, অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে এই চারটি গ্রাম হারিয়ে যাবে। চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১৫ দিনে পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং ৩০টি পরিবারের বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তানাহলে আয়তন কমতে কমতে চালিতাবুনিয়া পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘চালিতাবুনিয়ার বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু চালিতাবুনিয়ার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ না পেলে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারবো না। অন্যান্য রাজস্ব খাতে প্রস্তাব দিব। যদি বরাদ্দ হয়, কাজ হবে।’

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের এমপি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙনের কথা আমি জানি। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে আমি বলেছি। তারা পদক্ষেপ নিবে।’

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com