রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দপ্তর। সংলগ্ন সড়কটি ‘পরিসংখ্যান সড়ক’ নামে পরিচিত। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন গতকাল শনিবার বেলা দুইটায় সড়কটিতে বিজ্ঞান জাদুঘরের পাশের একটি স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটির সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। জায়গাটি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে মধ্য পীরেরবাগ এলাকা।
সরেজমিনে আজ রোববার সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে ওই এলাকার ‘৬০ ফুট সড়ক’ হিসেবে পরিচিত কামাল সরণিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অর্ধেকজুড়ে কোরবানির পশুর বর্জ্য জমে আছে। পচতে শুরু করা বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
৬০ ফুট সড়কের মধ্য পীরেরবাগের ওই জায়গাটি ছাড়াও আরও দুটি জায়গায় কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ দেখা গেল। দুটি স্থান হচ্ছে—মধ্যমণিপুর ও পশ্চিম আগারগাঁও। অথচ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ।
শুধু মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এলাকায় নয়, আজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটির (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে সড়কের পাশে, অলিগলিতে, বর্জ্য স্থানান্তরের অস্থায়ী কেন্দ্র বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় স্তূপাকারে জমে না থাকলেও অল্প পরিমাণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বর্জ্য।
শুধু উত্তর সিটি নয়, গত রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) রাতের মধ্যেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুরের কালশী এলাকাসংলগ্ন সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের একটি অংশে পৌনে ৭টার দিকেও কোরবানির কিছু বর্জ্য দেখা যায়।
মিরপুর–১১ নম্বরের সি ব্লকের ৫ নম্বর অ্যাভিনিউতে সিটি করপোরেশনের একটি কনটেইনারভর্তি পশুর বর্জ্য ছিল। স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি সেটা নিতে আসেনি।
ওই জায়গা থেকে আধা কিলোমিটার দূরেই মিরপুর প্যারিস রোড মার্কেটসংলগ্ন একটি অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের ভেতরেও কোরবানির বর্জ্য ছিল। এ ছাড়া মিরপুর বেনারসিপল্লি এলাকায় করপোরেশনের কনটেইনারে ও রাস্তার পাশে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অপসারণের পর অবশিষ্ট কিছু বর্জ্য পড়ে ছিল বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া অংশেও।
সকাল সাড়ে সাটটার দিকে ৬০ ফুট সড়কের মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় সড়কের পূর্ব পাশের অর্ধেকজুড়ে কোরবানির বর্জ্য স্তূপ হয়ে জমে থাকতে দেখা গেছে। সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া পলিথিনে ভরা বর্জ্যও সেখানে পড়ে ছিল।
এরপর মধ্যমণিপুর এলাকার বারেক মোল্লা মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমে থাকা কোরবানির বর্জ্যের পরিমাণ আরও বেশি। জমা বর্জ্যের কারণে রাস্তার মাত্র একটি লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। পচন ধরা বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, গতকাল বিকেলের পর ওই এলাকায় আর কোনো গাড়ি আসেনি। যে কারণে বর্জ্য বাসাবাড়ি ও এলাকার অলিগলি থেকে সংগ্রহ করা হলেও তা আর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয়নি। ৬০ ফুট সড়কের পশ্চিম আগারগাঁও অংশেও খালের পাড়ে বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ গতকাল রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হালনাগাদ তথ্য দিয়ে জানায়, ঈদের দিন উত্তর সিটি এলাকায় শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা শেষ হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাড়ে ৮ ঘণ্টায় ঈদের দিনের বর্জ্য অপসারণ করেছেন। এদিন ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় সাড়ে ৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বেলা একটার দিকে রাজধানীর কলাবাগান শিশুপার্ক–সংলগ্ন এসটিএস থেকে নিজেদের আওতাধীন এলাকায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া। তখন তাঁরা পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণের ঘোষণা দেন।
গতকাল রাত ৯টা ৪১ মিনিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান বার্তা দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানায়, ১২ ঘণ্টার আগেই দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে ১২ হাজার টন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি পশু প্রথম দিনে কোরবানি দেওয়া হয়েছে বলেও ওই বার্তায় জানানো হয়।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: প্রথম আলো