সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা: শতাধিক ঘরে আগুন, পালিয়েছে শত শত মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের নাটাই গ্রামে দুই গোষ্ঠীর দফায় দফায় সংঘর্ষে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেড় মাস ধরে চলা এই উত্তেজনায় গ্রাম পরিণত হয়েছে আতঙ্ক ও ধ্বংসের চিত্রে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শতাধিক ঘর, লুটপাটে নিঃস্ব শত শত পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, ১৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত একাধিকবার ঘরে আগুন লাগানো হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, চোখের সামনে আগুনে ছাই হয়ে গেছে তাদের কষ্টের স্বপ্ন।

বাকপ্রতিবন্ধী শাহজাহান মিয়ার চার কন্যা আকলিমা, মোসলেমা, তানিয়া ও খাদিজা আক্তারের স্বপ্নের দালানঘরও আগুনে পুড়ে গেছে। ২০২৪ সালে তারা একতলা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। বড় বোন আকলিমা বলেন, “৩০ লাখ টাকা খরচ করে ঘর তুলেছিলাম। সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”

ছলিমবাড়ির হাফসা আক্তার জানান, “১৪ মে দুপুরে গেইটে হামলা হয়, সন্ধ্যায় ঘর ছেড়ে পালাই। রাত ৩টার দিকে আগুন দেয়। ৪ বার আগুন দেয়, সর্বশেষ ১৫ মে সকাল ১০টায় আগুনে বিল্ডিংসহ সব শেষ হয়ে যায়।”

প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, মাদক সেবন নিয়ে ছলিম ও চান্দের বাড়ির লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। গত ৩১ মার্চ ছলিমবাড়ির তানিমকে মারধরের পর একের পর এক পাল্টাপাল্টি মামলা, সংঘর্ষ এবং মৃত্যু ঘটে। ১৪ মে সংঘর্ষ চলাকালে মিয়াজুল হোসেন (৪৫) নিহত হন।

এরপরই প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ছলিমবাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার, মোহাম্মদ আলী এবং এলাকার আরও অন্তত ৩০টির বেশি পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, অনেকের ক্ষয়ক্ষতি কোটি টাকার নিচে নয়।

স্থানীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কয়েকবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। চান্দেরবাড়ির মোবারক মিয়ার অনাগ্রহের কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি বলে অভিযোগ।

মিয়াজুলের মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ মে তার ছোট ভাই শাহাজুল ১২৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, “ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে, হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।” উপজেলা প্রশাসক মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, “সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া বলেন, “দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।”

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com