মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন

উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়ছে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতু উদ্বোধনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আগামী ২৫ আগস্ট খুলে দেওয়া হবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতু। কিন্তু, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়ছে সেতুটি। 

সেতু থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে তোলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বালু। পাইপের মাধ্যমে সেসব বালু ফেলা হচ্ছে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কঘেঁষা জমিতে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে সেতুর কাছ থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। তারা টাকার লোভে এ মূল্যবান সেতুকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

এ আইন অমান্য করে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে ওই সিন্ডিকেট। তারা বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে। 

সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে। বালু সিন্ডিকেটের সদস্যদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন তারা। 

গত ৫ জুলাই চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ড্রেজার বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করেন। কিন্তু, সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট ও তাদের বাহিনী নৌ পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।

পরদিন চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম জামান সরকার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। 

চলতি মাসেও তিস্তা সেতু এলাকায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় একজনকে আটক করে থানায় মামলা দায়ের করেন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে বালু তোলা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে গোলমাল হয়। পরে কয়েকদিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিছুদিন থেকে আবার বালু তোলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলাও দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কেউ বালু উত্তোলন করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।” 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেছেন, “সেতুর পাশে থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জেনেছি। এতে সেতু ও বেড়িবাঁধ হুমকিতে পড়তে পারে। আমি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে।” 

গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয়ের আওতায় ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তিস্তা সেতু প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণ করেছে। আগামী ২৫ আগস্ট সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। 

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com