জুলাই-আগস্ট ছিল গণঅভ্যুত্থান, এখানে কৃতিত্ব ভাগাভাগির কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট ছিল গণঅভ্যুত্থান, গণমানুষের অভ্যুত্থান। এখানে কৃতিত্ব ভাগাভাগির কিছু নেই। বিবেকের তাগিদ থেকে যে যতটুকু পেরেছেন, সে ততটুকু কাজ করেছেন। সুতরাং এটা হচ্ছে আমাদের সামগ্রিক কৃতিত্ব। গোটা বাংলাদেশের কৃতিত্ব।
রোববার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এ বৈঠক আয়োজন করে।
আলাল বলেন, সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথা যারা আমরা বলছি, এই সংবিধানে ৫৯ এবং ৬০ ধারা। এই দুটো জায়গায় ইংরেজিতে লেখা আছে, ‘লোকাল গভর্নমেন্ট’, বাংলায় লেখা আছে, ‘স্থানীয় শাসন’। তার মানে সেটা সরকার না, সেটা হচ্ছে শাসন। অথচ স্থানীয় সরকার হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষের সেবাবৃত্তিক।
সে জায়গায় এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় লেখা রয়েছে শাসন এবং আমাদের নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু বাংলা ভাষায় সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত রাষ্ট্রভাষা, সেজন্য ওটা কিন্তু শাসন রয়ে গেছে। আমরা কিন্তু সেটি নিয়ে কথা বলছি না। আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কী কী কৃতিত্ব, কে কী করেছে- মানে একটা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি।
তিনি বলেন, তবে এক্ষেত্রে বিতর্ক থাকাটা ভালো। বিতর্ক না থাকলে সমাজটাকে একটা মৃত সমাজ বলে মনে হয়। কিন্তু এই সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু বিষয় আমাদের থেকে উঠে যাচ্ছে। এই যেমন- পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক বন্ধন। এসব বিষয়গুলোর দিকে গণমাধ্যমের আরও বেশি তীক্ষ্ণ মনোযোগ, আবেগি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে জনযুদ্ধ ছিল সেটার কোনো মা-বাপ ছিল না। যে কারণে আমরা কাউকে জাতির পিতা হিসেবে মানিনি।
জুলাই আগস্ট আন্দোলনকে যারা শুধু ছাত্র-আন্দোলন বলেন তাদের সঙ্গে দ্বিমত করে আলাল বলেন, এটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। কারণ আওয়ামী বাহিনী যখন পুলিশ এবং র্যাবকে সঙ্গে নিয়ে, বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তখন নারী শিক্ষার্থীরা তার অগ্রভাগে ছিলেন সেসব হামলা প্রতিহত করার জন্য।
তারাও আহত হয়েছেন। তাদের কথা আজ বলা হচ্ছে না। নারীদের অবদানকে আজ সেখানে একপাশে রেখে দেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে পর্যন্ত বলা হচ্ছে ছাত্র-আন্দোলন। তাহলে ছাত্রীরা কোথায় গেলো? এটা হবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এই যে বৈষম্য, এ বৈষম্য দূর করার জন্য তো একটা লম্বা সময়ের প্রয়োজন।
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র কে ঢুকিয়েছে? কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা কি বলেছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতার যুদ্ধে গেলাম?’ কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা কবে বলেছেন যে ‘আমি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি সমাজতন্ত্র আদায়ের জন্য?’ এমন কথা কেউ বলেননি। তারপরও সেটি একতরফা হয়ে গেছে, করে দিয়েছে। এরকম একতরফা যেন না হয়, সেজন্য বিএনপি তো সবার আগে পদক্ষেপ নিয়ে বসে আছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবে সব শেষ যে বাক্যটি লিখেছি এর থেকে উত্তম কোনো প্রস্তাবনা যদি জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আসে তাহলে সেটাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো। এর থেকে বড় উদারতা দেখানোর আমাদের আর কী আছে? যদি আপনারা পরামর্শ দেন তাহলে বিএনপি সেটা অনুসরণ করবো।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, সচিবালয়টা কিন্তু মূলত সচিবালয় না। এটা মন্ত্রণালয়। আপনারা যদি সচিবালয় নামটা পরিবর্তন করতে পারেন আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত খুশি হবো। কারণ ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্টস অনুযায়ী- মন্ত্রণালয়ের যিনি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তিনি হচ্ছেন মন্ত্রী, সচিব না।
তাহলে চিফ অ্যাকাউন্টেবল অফিসার যদি মন্ত্রী থাকেন তাহলে সেটির নাম সচিবালয় হবে কেন? ওটার নাম হবে মন্ত্রণালয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশের একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি পরিবর্তন করে দিতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গের ওইটার নাম নবান্ন করে নিতে পারেন, আমরা এখনো কেন সচিবালয় বলবো?
তিনি বলেন, প্লাস্টিকের ফুলে কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই, সৌন্দর্য আছে। আমরা একটু ছেড়ে দেই। কিন্তু ঘ্রাণ এবং সৌন্দর্য দুটোই আছে বাগানের ফুলে। আমরা চাই বাংলাদেশটা একটা বাগানের ফুলে, পত্র-পল্লবে পল্লবিত হোক এবং এই বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর যে রহমত সেটা সবার আগে আমাদের কাছে প্রত্যাশা এবং একই সঙ্গে আমাদের সবার দেশপ্রেমের যে স্ফুরণটা সেটাকে যেন দলীয় এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি। তাহলেই কেবল একটা স্থায়ী সাফল্য আমাদের মধ্যে আসতে পারে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন দরবেশের সঞ্চালনায় বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী শপু,আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক স্টাফিল হোসেন আকন্দসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ