জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, রংপুরের জনগণ কেউ বলতে পারবে না যে আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে অপরাধী বানানো হলো। রংপুরের জনগণ সাক্ষী, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে তারাও কিন্তু পরবর্তীতে বলেছেন আমাদের জোর-জুলুম করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমার কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নাই, দুঃখ নাই।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগরী ও জেলা জামায়াত এ জনসভার আয়োজন করে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারবো, এটা কোনো সময় চিন্তায় আসেনি। আমি কারাগারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবে, এটা আল্লাহ ছাড়া ওকউ জানতো না। আজকে আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লক্ষ জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি, রহমত। যে গলায় আমার রশি পড়ানোর কথা ছিল, সেই গলায় ফুলের মালা পড়ানো হলো। আমার ফাঁসি দেওয়ার জন্য যে সমস্ত স্বাক্ষী যোগাড় করা হয়েছিল, তাদের মাধ্যমেই তো স্বাক্ষী দিয়ে আমাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। আল্লাহ আমাকে মুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, আমার মুক্তির প্রথম সোপান হচ্ছে আবু সাঈদ। যার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল। যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ৫ আগস্ট না হলে আপনারা আমার জানাজা পড়তেন। আমার মুক্তির জন্য আবু সাঈদ আমার পক্ষে কাজ করেছে। তার মৃত্যুই আমাকে মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আমি তার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।
দলীয় নেতাদের হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে আজহারুল ইসলাম বলেন, এখানে (মঞ্চে) যারা আছে তাদের চেয়ে আমার বয়স একটু বেশি। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের অনেকেই নেই। আমাদের দলের প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মিথ্যা মামলায় হত্যা করা হয়েছে। আমাদের পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তাকেও হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের পার্টির দুইজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামরুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশিম সাহেবকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই সমস্ত হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এই কারাগারে বিনা চিকিৎসায় অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা আবুল কালাম ইউসুফ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে তারা কি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, দুনিয়ার কোনো দেশে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই। কিন্তু তাদেরও তো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর চেষ্টা করা হলো। এটা আজব এক বাংলাদেশ। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের আজব এক চরিত্র।
জামায়াতে ইসলামীর মজলুম এই নেতা বলেন, আমার রায়ের মাধ্যমে এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পায়নি। আমাদের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিনের মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে ন্যায় রায়। তারা বলেছে এই আইনটিই বেআইনি। যে আইনের মাধ্যমে আমাদের দলের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীকে যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে- তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
আজকে আইনের মাধ্যমে আমি মুক্তি পেয়েছি, ইসলাম আন্দোলনও মুক্তি পেয়েছে। ৫ আগস্ট আমরা জেলখানায় ছিলাম। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি শেখ হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? আল্লাহ সরাসরি এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে আয়োজিত এই জনসভা বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জুমার নামাজের পরই জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। লোকসমাগম মাঠ ছেড়ে উপচে পড়ে সড়কে। জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলা৭১নিউজ/একেএম