বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ফেরত এসেছে বলে মন্তব্য করে নতুন কূটনৈতিক বিতর্ক উসকে দিলেন যুক্তরাজ্যে সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিষয়টি ভারতকেও যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, তার প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
ঘটনাটি মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যার, যখন প্রধানমন্ত্রী মোদি লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে ‘ভারত কী বাত সব কী সাথ’ নামে প্রবাসী ভারতীয়দের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন। বাংলা ট্রিবিউন।
সেখানেই বিশ্বের কূটনীতিতে ভারতের অবস্থান কী রকম সমীহজনক জায়গায় পৌঁছেছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন নিজে থেকেই।
শুধু তাই নয়, ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি মিয়ানমারের পছন্দ নয় বলে ভারতও সচেতনভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি ওই সভায় নিজে থেকেই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেছেন।
আর সেটা একবার নয়, অন্তত তিন-তিনবার। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যখন সমস্যা সৃষ্টি হলো তখন বিশ্বের নানা দেশ সেই প্রশ্নটাকে কেউ মানবাধিকার, কেউ আরো অন্য কিছু ইত্যাদি নানা রকম, যার যা অবস্থান নেয়ার নিয়ে নিলো। অথচ আমরা কিন্তু সেখানে আটকে থাকলাম না।’
‘যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ফেরত গেল (‘ওয়াপাস গ্যায়ে থে’), আমরা তখন বললাম, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু দেশ। কাজেই স্টিমার ভর্তি করে আমরা সেখানে চাল-ডাল, রসদ পাঠাতে লাগলাম।
যে রোহিঙ্গারা ওখানে এসেছে, তাদের তো উপোস করে মরতে দেয়া যায় না… এবং ভারতও মানবতার প্রশ্নে কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে পারে না।’
‘আর মিয়ানমারের ভেতরে যে রাখাইন প্রদেশ আছে, যেখানে লোকের এই সব সমস্যা ছিল কোনো উন্নয়ন হয়নি সেখানে। আমরা তখন মিয়ানমার সরকারের সাথে সমঝোতা করলাম যে…রাখাইন প্রদেশের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য আমাদের পে যতটা অবদান রাখা সম্ভব, আমরা তা করব!’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ভারতের ঘোষিত অবস্থান থেকে অন্তত দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিচ্যুতি আছে। এক. প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা শব্দের ব্যবহার আর দুই. রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ‘ফেরত গেছে’, এটা বলা।
বস্তুত রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূলেই আছে মিয়ানমারের এই তত্ত্ব যে, রোহিঙ্গারা আদতে বার্মার মূল বাসিন্দা নয়। তারা হলো বাঙালি মুসলিম যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে।
ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদি যদি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ‘ফেরত গেছে’, তাহলে প্রকারান্তরে মিয়ানমারের সেই বক্তব্যকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটা রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের এত দিনের অবস্থানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
আর এ কারণেই বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও ধন্দে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন নানা অনুরোধেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে মোটেই রাজি হননি।
তবে মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুধু বলেছেন, “হয়তো প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে গেছেন’ বলতে গিয়ে কথার তোড়ে মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ফেরত গেছেন’। কিন্তু আমার পে না জেনে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়, এটা নেহাতই একটা অনুমান বলতে পারেন!’
প্রধানমন্ত্রী মোদির এই অভাবিত মন্তব্যে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলও বেশ বিচলিত। এটাই এখন ভারতের পরিবর্তিত অবস্থান, নাকি প্রধানমন্ত্রী শুধু বেখেয়ালে ফেরত যাওয়ার কথা বলে ফেলেছেন, তারা সে বিষয়টি স্পষ্ট করে নিতে চান। সূত্র : এরাবিয়ান জার্নাল।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস