সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:২১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড চৌদ্দগ্রামের তিন মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা ঘোষণা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করতে ১০ বছরের প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে’ নিরাপদ খাদ্যের অভাবে রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগছে না: খাদ্য উপদেষ্টা রাষ্ট্র সংস্কারের সব বিষয়ে আমরা একমত হবো না: আলী রীয়াজ অন্তর্বর্তী সরকারের সুচিন্তিত নীতির ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে: প্রেসসচিব কারিগরি শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই: শিক্ষা উপদেষ্টা কেন ‘জুলাই’ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, জানালেন আসিফ মাহমুদ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে : মির্জা ফখরুল

বস্তিতে নবজাতকের ঝুঁকি কমেছে ১৬%, গর্ভবতীদের ওজন বেড়েছে ১.৪ কেজি

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার বাউনিয়াবাদ বস্তিতে পরিচালিত নিউট্রি-ক্যাপ নামের এক আধুনিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা মডেলের কার্যকারিতা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই কর্মসূচির ফলে গর্ভবতী নারীদের গড় ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৪ কেজি, নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি কমেছে ১৬ শতাংশ, এবং কিশোরী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষণীয় হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নগর দরিদ্র অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় উপেক্ষিত বস্তিবাসীদের জন্য এই সফল মডেল নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি’র সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে ‘নিউট্রি-ক্যাপ’ গবেষণার এই ফলাফল তুলে ধরা হয়।

প্রকল্পটি আইসিডিডিআর,বি’র ‘অ্যাডভান্সিং সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস (অ্যাডসার্চ)’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয় ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঢাকার মিরপুরের বাউনিয়াবাদ বস্তিতে বসবাসরত ১৬,৫৩২টি পরিবারের মধ্যে ২,৮২৬টি পরিবারকে নিয়ে গভীরভাবে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব গর্ভবতী নারী ‘নিউট্রি-ক্যাপ’ কর্মসূচির আওতায় ছিলেন, তাদের গড় ওজন বৃদ্ধি ছিল ৮.৯ কেজি, যেখানে তুলনামূলক গ্রুপে তা ছিল ৭.৫ কেজি। সেবাগ্রহণকারীদের মধ্যে হাসপাতালে সন্তান জন্মদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, গর্ভপাত, মৃতভ্রুণ এবং নবজাতকের মৃত্যুহার কমেছে, এবং গর্ভকালীন কম ওজনের সন্তান জন্মের ঝুঁকি প্রায় ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এই সেবাপ্যাকেজে গর্ভবতীরা মাসে অন্তত একবার বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে পুষ্টি পরামর্শ, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সরবরাহ পেয়েছেন। এছাড়া নিয়মিত রক্তচাপ, হিমোগ্লোবিন, ওজন ও রক্তে শর্করার মান পর্যবেক্ষণ এবং প্রসবপূর্ব চেকআপের ব্যবস্থা ছিল।

কিশোরীদের মধ্যেও দেখা গেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। তাদের গড় হিমোগ্লোবিন ১২.০ গ্রাম/ডেসিলিটার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৮ গ্রাম/ডেসিলিটার। অপুষ্টিজনিত ক্ষীণকায় ছিল ১৪.৯ শতাংশ, আর ১২.৬ শতাংশ ছিল অতিরিক্ত ওজনের—যা দেশের শহরাঞ্চলের গড় হারের কাছাকাছি। যদিও খাদ্য বৈচিত্র্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে অনেকখানি।

গবেষণার আওতায় থাকা দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্যেও লক্ষ্য করা গেছে উন্নতি। তাদের উচ্চতা ও ওজন উভয়েরই উন্নতি হয়েছে। অন্ত্রের প্রদাহ কমেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। জৈবিক পরীক্ষায়ও এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও ‘নিউট্রি-ক্যাপ’ কর্মসূচির সফলতা প্রমাণিত হয়েছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ কমেছে, যদিও স্বাস্থ্যসেবার জন্য সময় বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। গবেষণার সার্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মানবসম্পদ খাতে ব্যয় সবচেয়ে বেশি হলেও মডেলটি পরিকল্পিতভাবে প্রয়োগ করলে সামগ্রিক খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

গবেষক দলের প্রধান ড. মোস্তফা মাহফুজ বলেন, “এই মডেল সফল হয়েছে কারণ এটি জনগণের কণ্ঠ শুনেছে, স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আর্থিক সংকট—সব কিছুর একত্র সমাধান খুঁজেছে। মানুষের সহমর্মিতা এবং তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা একত্রে মিললে এর সম্ভাবনা সীমাহীন।”

আইসিডিডিআর, বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “বস্তিবাসী দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। নিউট্রি-ক্যাপ প্রমাণ করেছে, অভিযোজিত ও জনসম্পৃক্ত মডেল কেবল কার্যকর নয়, বরং তা দেশের অন্য বস্তি এমনকি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতেও প্রসারণযোগ্য।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ, জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার প্রতিনিধি। 

সমাপনী বক্তব্যে অ্যাডসার্চ প্রকল্প পরিচালক ও আইসিডিডিআর,বি’র প্রফেসর ইমেরিটাস ড. শামস এল আরিফিন বলেন, “এই মডেলটি দেশে বৃহৎ পরিসরে সম্প্রসারণ এবং সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে ব্যবহারযোগ্য একটি কার্যকর কাঠামো হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”

গবেষণায় বাউনিয়াবাদ বস্তিকে “নগর দারিদ্র্যের প্রতিচ্ছবি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে প্রতিটি পরিবারের গড় আয় মাত্র ২১,০০০ টাকা। পরিবারগুলোর ২৫ শতাংশ খাদ্যসংকটে ছিল, ৯০ শতাংশের বেশি কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত, এবং ৪২ শতাংশ পরিবারের নারীরা আয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেও, এক-তৃতীয়াংশ পরিবারের প্রধান প্রাথমিক শিক্ষাও সম্পন্ন করতে পারেননি।

এমন প্রেক্ষাপটে নিউট্রি-ক্যাপ মডেল হয়ে উঠেছে শুধু একটি গবেষণা নয়, বরং নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর একটি অভিযোজিত, কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য পথনির্দেশ।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com