ময়মনসিংহের ত্রিশালে যে ট্রাকচাপায় শিশুসন্তানসহ এক দম্পতি নিহত হয়েছিলেন, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মায়ের পেট ফেটে বেরিয়ে এসেছিল এক শিশু, সেই ট্রাকের চালক রাজু আহমেদ শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত নিহতদের গাড়ি চাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। শিপন গত ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিলেন।
এর মধ্যে সে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করে সে পুনরায় রাজশাহী যান। ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরবর্তীতে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টার সময় রওয়ানা করেন।
পথে সে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে শিপন ঢাকাগামী একটি বাসে উঠেন। পরবর্তীতে বাস থেকে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছান। সেখান থেকে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন।
৬-৭ মাস আগ থেকে সে শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। গাড়িটিতে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। গাড়িটির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ। গাড়িটির ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় ওজন ১৩.৫ টন ছিল। শিপনের ভারী যানবাহন চালানোর জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই।
আগে তার মধ্যম সারির গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। শিপন ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাকড্রাইভারের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনায় তার বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে প্রায় ৬ বছর গাড়ি চালাননি। তার এখনও বাম পায়ে সমস্যা রয়েছে।
র্যাব জানায়, ১৬ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তার আট মাসের স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থানকালীন ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে তাদের চাপা দেয়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), তার স্ত্রী রত্মা বেগম (২৬)।
তার ৩ বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যায়। দুর্ঘটনার সময় রত্মা বেগমের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্র্তীতে চিকিৎসার উদ্দেশ্য তাকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ