রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টানা ৮ দফা কমার পর ফের বাড়লো সোনার দাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ: আব্বাস আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ এবি ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা রূপালী ব্যাংকের ঢাকা উত্তর বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমাবেশের ডাক ছাত্রলীগের ৮ মের উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিলো মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি সদস্য ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ মৌলভীবাজারে পুলিশের বাধায় ছাত্রদলের মিছিল পণ্ড প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, গ্রেফতার ৭ পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উত্তরায় লেক থেকে দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো : মস্কো খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ১৪ দিন পর ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হাসপাতালের ভবনের ফাঁক দিয়ে পড়ে রোগীর মৃত্যু রোববার থেকে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ

স্বজনদের কেয়ারে চলে লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮
  • ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, এম.নাজিম উদ্দিন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দুমকীতে নির্বাহী পরিচালকের আত্মীয়-স্বজনদের কেয়ারে চলছে লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার।

স্বজনদের লুটপাট, অনিয়ম-দূর্নীতি আর মাদকের থাবায় দিনে দিনে মুখ থুবড়ে পড়ছে লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় পরিবার কেন্দ্রিক হয়েছে উঠেছে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটির। ১৯৯৭ সালে উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠির প্রসূতি মা ও শিশু চিকিৎসা সেবার  লক্ষে পটুয়াখালীর দুমকীর শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মি. এডকস্ট নামে এক আমেরিকান অধিবাসীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর এনজিও ব্যুরোতে এনজিও হিসেবে নিবন্ধন পায় লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার বাংলাদেশ নামে এ হাসপাতালটি। পাশের বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বরগুনা, আমতলীর প্রত্যন্ত গ্রামের অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠির প্রসূতি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবায় অল্প দিনের মধ্যেই সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিষ্ঠা পায় এ অঞ্চলের  হতদরিদ্র পরিবারের প্রসূতি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা আর নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে। বহি:বিভাগ (ওপিডি), জরুরী স্বাস্থ্য সেবা, অভ্যন্তরীন বিভাগ (আইপিডি), প্যাথলজী, অপারেশন থিয়েটার, ফার্মেসী, ব্লাড ব্যাংকসহ নিয়মিত পরিচালনা করে আসছিল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মতো জরুরী সব স্বাস্থ্য সেবা।

ভ্রাম্যমান টিমের স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে বরগুনার তালতলী, বাউফলের সাবপুরা, বাকেরগঞ্জের নলুয়াসহ দক্ষিনাঞ্চেলের বিভিন্ন পয়েন্টে সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে দিয়ে আসছিল চিকিৎসা সেবাও। কিন্তু ছলেবলে ২০১১ সালের দিকে পাবনা এলাকার মি. পিউস ছেড়াও নামে নির্বাহি পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই ভেঙে পড়তে শুরু করে এর সেবা কার্যক্রম।

প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে বিভিন্ন কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়াদি। দায়িত্ব গ্রহনের পর অল্প দিনের ব্যাবধানে পরিচালক পিউস ছেড়াও পুরো হাসপাতাল নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভগ্নিপতি রেভা: ডেবিড ঘোষকে হাসপাতালের চিফ অফ এডমিন, বৈধ সার্টিফিকেট না থাকলেও একটি খুন মামলার (মেহেরপুরের মুজিবনগর থানায় জি আর মামলা নং- ১৫৬/১৩, তারিখ- ২২/০৩/২০১৩) চার্জসীটভুক্ত ২ নম্বর আসামী ও নিজ এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ভাগ্নে বেনোডিক্ট রোজারিও সেন্টুকে ফার্মাসিস্ট, মাইকেল বিশ্বাসকে গাড়ীচালকসহ বেশ কয়েক জনকে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদান ও একই সঙ্গে অর্থপেটিক্সের ডাক্তার ডেবিট রোজারিও, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত বাইন, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উত্তম, ফার্মাসিস্ট ফুল বাবু, নার্স সুলভ রেমা, পাখি কর্মকার, চা মেরি মন্ডসহ স্বনাম ধন্য আরো কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীকে চাপ প্রয়োগ করে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করেন।

নিজস্ব এসব লোকজনকে সুবিধা দিতে উচ্চতর স্কেলে বেতন বরাদ্ধ দিয়ে অপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সৃষ্টি করেন বেতন বৈষম্য। পৃথক স্যালারী সীটও ব্যাবহার করা হয় নিকট এসব আত্মীয়-স্বজনদের বেতন-ভাতা দিতে। বৈদেশিক সাহায্যে পরিচালিত কর্মচারীদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনসহ আস্থাভাজনদের বেতনের সঠিক অংক গোপন রাখতে পৃথক সীটের মাধ্যমে ঢাকার একটি ব্যাংক শাখা ও বরিশাল সদরের সিটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন প্রদান করা হলেও অন্যদের বেতন প্রদান করা হয় রুপালী ব্যাংকের স্থানীয় দুমকী শাখা থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন আর হাসপাতালের ড্রেস অ্যালাউন্স দেওয়া হয় না। ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের। ৪শ’ টাকা চিকিৎসা ভাতা দিয়ে তুলে দেওয়া হয় ফ্রি চিকিৎসা ব্যাবস্থা।’

তিনি আরো জানান, হাসপাতালের শুরুতে শুন্য থেকে ৬ মাসের শিশুদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও এখন তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। আল্ট্রাসনো ফি করা হয়েছে ৩০শ’ টাকার পরিবর্তে ৪শ’ টাকা। কেবিনের ভাড়াসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে কয়েক গুন। আগের সেই পরিচ্ছন্নতা নেই হাসপাতালের। পরিচালক আছেন কেবল আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে লুটপাট আর ভাগভাটোয়ারার তালে। কমিটির মাধ্যমে হপিটাল ইকুয়েবমেন্টসহ যাবতীয় কেনা কাটার নিয়ম থাকলেও হিসাবরক্ষক (কেসিয়ার) রেখা ও  বেনোডিক্ট রোজারিও সেন্টুকে নিয়ে হাসপাতালের কেনাকাটার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন পরিচালক পিউস ছেড়াও বলে অভিযোগ রয়েছে। চাকুরী হারানোর ভয়ে নানা অনিয়ম-দূণীর্তির বিষয়ে সাহস পাচ্ছে না কেউ।’

তিনি আরো জানান, ‘বছর খানেক আগে হাসপাতালের রোগিদের জন্য বিদেশ থেকে আসা এক ডজন বেডসহ (খাট) বিভিন্ন ধরনের ইকুয়েবমেন্ট হাসপাতালে ব্যাবহার না করে উচ্চ মূল্যে তা বিক্রি করে দিয়েছে পরিচালক। হাসপাতালের বাউন্ডারী সীমানার বাহিরে থাকা হাসপাতালের স্থানীয় মাপের চার করা জমি স্থানীয় একজনের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি তার স্বজনদের নিয়ে। তিনি জানান, হাসপাতালে এখন ৬৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন কর্মচারী বলেন, ‘এনজিওর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট র্কসূচি, চিলড্রেন স্কুল, বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও মাদক বিরোধী নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা থাকলেও এই হাসপাতালে ছুটিরপর ও রাতে বসে মাদকের নিয়মিত রমরমা আড্ডা। হাসপাতালে সেবার আড়ালে প্রতিদিন গভীর রাধ অবধি চলে মাদক সেবন ও পরিচালকের কয়েজন কর্মচারীর জমজমাট মাদক ব্যাবসা। যার ভাগ পাচ্ছেন পরিচালক নিজেও।

২০১৬ সালের ৩০মে, বরগুনায় স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনার নামে একটি ডবল কেবিনের টয়োটা পিকাপ (ঢাকা মেট্্েরা-ঠ-১১-৩৯৪৫) গাড়ীতে তালতলীর রাখাইন পল্লী থেকে ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্যে পরিবহন কালে বরগুনার তালতলী থানার ৩নং কড়াইবাড়িয়া ইউপি এলাকায় ৯লিটার চোলাইমদসহ অভিযান পরিচালনাকালে তালতলী থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামানের হাতে গ্রেফতার হন পরিচালকের আত্মীয় হাসপাতালের কর্মচারী বেনোডিক্ট রোজারিও সেন্টু, একেএম আমিনুল হক, মাইকেল বিশ্বাস, ডা. সৈয়দ মো. আনছার আলী, ডা. স্বপন সরকারসহ পাঁচজন। পরে বিশেষ বিবেচনায় দুই ডাক্তারকে ছেড়ে দিলেও অপর তিনজনকে ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২২ (গ) ধারায় মামলা দিয়ে (তালতলী থানায় মামলা নং- ১৮, তারিখ- ৩০/০৫/১৬ ইং) জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। কোর্টে ওই মামলা এখনো চলমান আছে। কিন্তু ওই সময় হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ৩ জনের জেল হাজতে থাকার কারণে সাব-সেন্টারগুলোর কার্যক্রম বন্ধ, চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে বিপর্যয় এবং মিডিয়ায় ওইসব খবর প্রকাশ হলেও আসামিরা পরিচালকের নিকট আত্মীয় হওয়ায় হাসপাতালে চাকুরীতে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। উপরন্তু হাসপাতালের আড়ালে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তারা ওই মাদক ব্যাবসা।

এ ব্যাপারে পাশের আঙ্গারিয়া ও মুরদিয়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আয়শা আক্তার ও শামিমা আক্তার নামে দুই সন্তান সম্ভবা নারী অভিন্ন বলেন, ‘আগের মতো হাসপাতালে রোগীদের যতœ হয় না। গরিব মা-শিশুর সেবার জন্য হাসপাতাল করা হলেও এখন গরীবরা কোন সুযোগ-সুবিধা পায় না এখানে। পরীক্ষা করাতেও খরচ পরে আগের চেয়ে বেশি। বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা থাকলেও ১শ’ টাকা নেয় টিকিট করতে। জাস্টিন বাউজান্ডির মতো বিদেশি একজন ডাক্তার আর দু’ই একজন কর্মচারির জন্য এখনো এখানে রোগিরা আসেন।’ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের মতো হাসপাতালে প্রসূতি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দাবিও করেন তারা।

এ ব্যাপারে উক্ত অভিযোগগুলো আস্বীকার করে লুথার‌্যান হেলথ কেয়ার বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক মি. পিউস ছেড়াও বলেন, এখানে অনিয়ম দূর্নীতি করার কনো সুযোগ নেই। যথা নিয়মেই চলছে লূথার‌্যান হেলথ কেয়ার।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com