বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যুর প্রায় তিন দিন পর অবশেষে দুবাইয়ের কর্তৃপক্ষ তার মরদেহ মঙ্গলবার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে।
তার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষ হয়ে গেছে বলেও দুবাই সরকারের মিডিয়া অফিস এদিন টুইট করে জানিয়েছে।
তবে শ্রীদেবীর ময়নাতদন্তে যে রকম অস্বাভাবিক সময় লেগেছে ও ‘বাথটাবে দুর্ঘটনাবশত পানিতে ডুবে মৃত্যুর’ যে কথা ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার পর থেকেই তার মৃত্যুর পেছনে আসল রহস্যটা কী- তা নিয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে।
তার স্বামী বনি কাপুরকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদিকেও ভারতেও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন শ্রীদেবীর মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক ছিল না।
কিন্তু কেন ও কীভাবে এই মৃত্যুকে ঘিরে এত প্রশ্ন ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে?
গত শনিবার রাতে দুবাইয়ের বিলাসবহুল হোটেল জুমেরাহ এমিরেটস টাওয়ারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে সুপারস্টার শ্রীদেবীর মৃত্যুর প্রায় বাহাত্তর ঘণ্টা পর তার মরদেহ অবশেষে এদিন সন্ধ্যায় ভারতের উদ্দেশে রওনা হতে পারছে।
মৃত্যুর কারণ ও সঠিক সময় নিয়ে নানা পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা ও বিবরণ, ফরেনসিক রিপোর্টে বাথটাবে জলে ডুবে মৃত্যু উল্লেখ, দুবাইয়ের সরকারি কৌঁসুলিকে সোমবার রাতে এ মৃত্যুর তদন্তের ভার দেওয়া – সব মিলিয়ে গত তিন দিন ধরে শ্রীদেবীকে নিয়ে রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে।
তবে এদিন বিকালে দুবাই কর্তৃপক্ষ অবশেষে টুইট করে জানিয়েছে – এই ‘কেস ক্লোজড’!
সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নভদীপ সুরি এদিন জানান, ‘আমাদের টিম আগাগোড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে এবং পুলিশের কাছ থেকে অবশেষে ছাড়পত্রও মিলেছে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইমিগ্রেশন বিভাগের কিছু ফরমালিটি বাকি আছে, তারই কাজ চলছে।’
তিনি আরও জানান, ‘নিয়মমাফিক সব পদ্ধতি শেষ করতে দুবাই সরকার তাদের সময় নিয়েছেন, এখন আমরা তার মরদেহ যত দ্রুত সম্ভব ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ মঙ্গলবার শ্রীদেবীর পরিবার জানায়, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লেতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
তবে দুবাই কর্তৃপক্ষ আপাতত ‘তদন্ত শেষ’ বলে জানিয়ে দিলেও শ্রীদেবীর মৃত্যু নিয়ে ভারতে মূল ধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পরিমাণ জল্পনা-কল্পনা চলছে তা প্রায় নজিরবিহীন।
৫৪ বছরের একজন সুস্থ-সবল মহিলা কীভাবে বাথটাবে জ্ঞান হারিয়ে ডুবে যেতে পারেন, তা নিয়ে অবিরাম প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
তার স্বামী বনি কাপুরকে দুবাই পুলিশ জেরা করায় এবং শ্রীদেবীর স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তান অভিনেতা অর্জুন কাপুর এদিন সকালে তড়িঘড়ি দুবাই পাড়ি দেওয়ায় মিডিয়ার সন্দেহ আরও দানা বেঁধেছে।
আর এরই মধ্যে আরও মারাত্মক অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা ও এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
স্বামী বলছেন, ‘প্রথমে বলা হল হার্ট অ্যাটাক, পরে সেটি পাল্টে গেল। তার পর জানা গেল দুর্ঘটনা, বলা হল তার রক্তে না কি অ্যালকোহল ছিল। যে শ্রীদেবীকে আমরা জানতাম তার কোনোটার সঙ্গেই কিন্তু এগুলো যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এটি একটি হত্যাকাণ্ড- যদিও মোটিভটা কী, সেটা আমি জানি না। তবে সবাই জানে বলিউডের সঙ্গে দুবাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক ঘনিষ্ঠ ও অস্বাস্থ্যকর যোগাযোগ আছে। হতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারই সম্পর্ক আছে।’
মধু কিশওয়ারের মতো অ্যাক্টিভিস্ট আবার প্রশ্ন তুলেছেন, শ্রীদেবীর কথিত ক্র্যাশ ডায়েট কোর্স ও জিরো ফিগার রাখার জন্য নানা ক্লিনিক্যাল চিকিৎসাই অকালে তার মৃত্যু ডেকে এনেছে কিনা।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত গুরজিৎ সিং আবার বলছেন, শ্রীদেবীর ফরেনসিক রিপোর্টই আসলে এসব সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
দুবাইতে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করা মি সিং বলছিলেন, ‘সেখানে হাসপাতালের বাইরে যে কোনো মৃত্যুই পোস্টমর্টেমের জন্য যায়। এ ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল না কি তার আইনগত প্রয়োজনীয়তা ছিল আমি জানি না; কিন্তু ঘটনা হল এই রিপোর্টে যেখানে সব অস্পষ্টতার উত্তর মিলবে বলে ভাবা হয়েছিল, দেখা গেল তার বদলে তা আরও বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে।’
শ্রীদেবীকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য মুম্বাইসহ গোটা ভারত যখন অধীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে, তার মধ্যেও কিন্তু সেই বিভ্রান্তির রেশ রয়েই যাচ্ছে।
আর গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে ট্রেন্ডিং টপিকগুলোর মধ্যে একটি ছিল ‘বাথটাব’!
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস