শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:১১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টানা ৮ দফা কমার পর ফের বাড়লো সোনার দাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ: আব্বাস আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ এবি ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা রূপালী ব্যাংকের ঢাকা উত্তর বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমাবেশের ডাক ছাত্রলীগের ৮ মের উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিলো মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি সদস্য ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ মৌলভীবাজারে পুলিশের বাধায় ছাত্রদলের মিছিল পণ্ড প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, গ্রেফতার ৭ পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উত্তরায় লেক থেকে দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো : মস্কো খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ১৪ দিন পর ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হাসপাতালের ভবনের ফাঁক দিয়ে পড়ে রোগীর মৃত্যু রোববার থেকে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ

শীত থেকে বাঁচতে গিয়ে যেভাবে আগুনে পুড়ছে মানুষ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে
শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছেন অনেকে।

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশে তীব্র শীতে উষ্ণতার জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে।

এ মাসেই কেবলমাত্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এমন ২১ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী মারা গেছেন।

সেখানে বার্ন ইউনিটে ভর্তি শত ভাগ রোগীই একই ভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এসেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গত মাসে যে পরিমাণে রোগী ভর্তি হয়েছেন এ মাসের আরো বারো দিন বাকি থাকতেই সেই সংখ্যা অনেক ছাড়িয়ে গেছে।

আক্রান্তদের মধ্যে বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের সংখ্যা অনেক বেশী।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে সপ্তাহ খানেক হল ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ আলো রানী দাস।

আগুনে পোড়া রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে।

আগুনে পোড়া রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে।

তিনি বলছেন, “খড়ের আগুন জালানো দেখে আমি সেই আগুন পোহাতে গিয়েছি। মেঘলা মেঘলা, কুয়াশা পড়ছে তো তাই শীত লাগে। এই আগুন পোহাতে গিয়েই আমার এই বিপদ। শাড়িতে আগুন লেগে উপরের দিকে উঠে সারা শরীর আমার আগুনে পুড়ে গেছে।”

জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সম্ভব নয় এমন বহু রোগী সারা বাংলাদেশের নানা অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এসেছেন।

এখানে জায়গার অভাবে মেঝেতেও দেখা গেলো অগ্নিদগ্ধ অনেক রোগীকে।

আশপাশে আত্মীয়দের ভীড়। মাকে নিয়ে আঠারো দিন হল এখানেই থাকছেন ডেমরার আনোয়ারা বেগম।

তিনি বলছিলেন, “মা ভোর চারটার দিকে উঠে নিজেই চুলায় ওজুর জন্য পানি গরম দিয়েছে। তারপর চুলার পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। শাড়ীর আঁচলে আগুন লেগে গিয়েছিলো। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা উঠি। পা থেকে পিঠ পর্যন্ত তার পুরোটা পুড়ে গেছে।”

 

কাছাকাছি বিছানাতে শুয়ে ছিল ছয় বছরের কেয়া মনি। পরীক্ষায় প্রথম হয়ে মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে ক্লাস শুরু করেছিল। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে গিয়ে পুড়েছে পুরো শরীর। কোমর থেকে গলা অবধি ব্যান্ডেজ নিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে হাসপাতালের বিছানায়।

মা আমেনা বেগম বলছেন, “আমি হঠাৎ কল তলা থেকে ওর চিৎকার শুনলাম। ও আমার দিকে দৌড়ে আসছিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তাতে আমার কাপড়ের সাথে লেগে ওর শরীরে চামড়া সব উঠে গেছে।”

এমন ভয়ানক কাহিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আরো শোনা যায়।

কেয়া মনির শরীর পুড়ে গেছে তীব্র শীতে গরম পানিতে গোসল করতে গিয়ে।

কেয়া মনির শরীর পুড়ে গেছে তীব্র শীতে গরম পানিতে গোসল করতে গিয়ে।

সেখানকার চিকিৎসক গোবিন্দ বিশ্বাস জানিয়েছে গত মাসে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি অগ্নিদগ্ধ রোগী বার্ন ইউনিটের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এ মাসে এখনো ১২ দিন বাকি থাকতেই সে সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হয়ে গেছে।

গত মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫০ কিন্তু এমাসে সেটি ইতিমধ্যেই ৪৪০ জন। শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা উত্তরবঙ্গেই বেশি ঘটছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা: নুর আলম সিদ্দিক বলছেন শীতকালে এমনিতেই আগুনে পোড়া এমন রোগী বেশি আসে। কিন্তু এবার আরো বেশি মনে হচ্ছে।

তিনি জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা, যেমন রংপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি।

আর তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। তিনি জানিয়েছেন যেসব রোগী ভর্তি আছে তার ৬৫ ভাগই নারী। ঢাকা মেডিকেলে গিয়েও এমন ধারনাই পাওয়া গেলো। বিশেষ করে বয়স্ক নারীরাই বেশি শিকার হচ্ছেন এ ধরণের ঘটনার।

শীতকালে অগ্নিদগ্ধ হলে সেটি অন্য সময়ের থেকে মারাত্মক হয়ে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা ড: সামন্ত লাল সেন বলছেন, “এই যে আমার পরনে যে কাপড় এর উলের তৈরি সোয়েটার, লেপ, কাঁথা বা কম্বল এমন ভারি কাপড় অনেক দ্রুত ছড়ায় এবং তীব্রতা বেশী থাকে তাই পুড়ে যাওয়ার মাত্রা অনেক বেশি থাকে।”

ডাঃ সামন্তলাল সেন: 'শীতের দিনে গরম কাপড়ের কারণে আগুন দ্রুত ছড়ায়'।

ডাঃ সামন্তলাল সেন: ‘শীতের দিনে গরম কাপড়ের কারণে আগুন দ্রুত ছড়ায়’।

রোগীদের বড় অংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলছেন তার অভিজ্ঞতায় যে ধরনের ঘরে বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ বসবাস করেন সেটিও একটি কারণ।

খড়কুটোর ঘরে রাতে আগুন পোহানো গ্রামে শীতকালে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম কারণ। আর বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে গরীব মানুষের বাড়িঘর বানানো হয় দ্রুত আগুন লাগে তেমন বস্তু দিয়ে। সেখানে খুব গাদাগাদি করে থাকা ঘরের ভেতরেই হয়ত রান্না হয়। বিশেষ করে শীতকালে। তাতে অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকি অনেক বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে এখন যে তীব্র শীত বয়ে যাচ্ছে সেটি আরো তিন চারদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সামনে আরো এক দফা মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। তাই এমন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা আরো ঘটার আশংকা রয়েই যাচ্ছে।

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা/কেএম

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com