নদী মাতৃক দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি শহরটি ৩ দিক থেকেই নদী বেষ্টিত। দক্ষিণে সুগন্ধা, পশ্চিমে গাবখান ও পূর্ব দিকে সুতালড়ি। ঝালকাঠি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বুক চিরে বয়ে গেছে এ ৩টি নদী। বর্ষাকালে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে অনেক বসতভিটা তলিয়ে যায়। আর শীতকালে নদীর শীতল বাতাসে প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়।
কয়েকদিনের তীব্র শীতে নদী তীরবর্তী উপকূলের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সকাল এবং সন্ধ্যায় খড় অথবা আবর্জনা পাতায় আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে ছিন্নমূল মানুষ। রোববার রাত ৮টার দিকে এমনটাই দেখা গেলো বিষখালী নদী তীরবর্তী কিস্তাকাঠি গ্রামে।
বিষখালী নদীর তীরে আমেনা বেগমের ঝুপড়ি ঘরে উত্তরা বাতাসের শীতল প্রবাহ। হাসিনা বেগমের নিচু ঘরে মাথার ওপরে থাকা টিনের চালা দিয়ে ক্রমাগত ঝরে শিশিরের ফোটা।
আবার আবদুল আজিজ ঘরের সবগুলো কাঁথা একত্রিত করেও শীত নিবারণ করতে পারছেন না। এভাবেই নদী তীরবর্তী উপকূল অঞ্চলের হাজারো মানুষ এবারের তীব্র শীতে কাতর।
আমেনা বেগম দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। স্বামী নেই। থাকেন মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পর শীত নিবারণের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকে না আমেনার। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘কই পামু? আমাগো তো কিছুই নাই। জমাজমি সব ওই গাঙে লইয়া গ্যাছে। এখন থাকি মাইনসের বাড়ি। শীতের কাপড় আমারে কে দিবে? পুরানো ছেড়া একটা সোয়েটার ছিল, সেটা পরি। পাতলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে থাকি।’
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় এসে বিভিন্ন এলাকায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
অন্যান্য সমস্যার মাঝে শীত যেন তাদের কাছে একটু বাড়তি সংকট নিয়ে আসে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি খরচ করার সুযোগ এদের নেই। শীতের নতুন কাপড় কেনার কথা অভাবনীয় তাদের কাছে।
শীত মৌসুম গ্রামে ‘রবি মৌসুম’ হিসেবে পরিচিত হলেও এ মৌসুমে সব মানুষের কাজ থাকে না। কারণ নদী তীরবর্তী এলাকার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে শুকনো মৌসুমে তাদের ঘরে অভাব বিরাজ করে। ফলে শীত নিবারণে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে না। আবার বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র দেওয়া হলেও তা এসব মানুষের কাছে পৌঁছায় না।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র শীতার্তদের শীত নিবারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ১৬ হাজার পিস কম্বল জেলার ৩২ ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৪৭০ পিস করে বণ্টন করা হয়েছে। জেলা প্রশসানের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকায় ৪৬৮ পিস কম্বল কিনে শহর ও শহরতলীর হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।এছাড়াও ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে জেলার ৪ উপজেলায় ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ টাকার এবং দুটি পৌরসভায় ২ লাখ ১৪ হাজার ১১৯ টাকার কম্বল কিনে বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/পিকে