শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
‘ইসরায়েলগামী’ ৩ জাহাজে হুথির ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সিআইপি হলেন প্রাণ-আরএফএলের তিনজনসহ ১৮৪ ব্যবসায়ী হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত, আহত ৫০ জুয়া ও হুন্ডির কারণে মুদ্রাপাচার বাড়ছে: অর্থমন্ত্রী একনেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিতে প্রভাব পড়বে না: সালমান এফ রহমান খোলাবাজারে ডলার ১২৫ টাকা মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ খাদ্যমন্ত্রীর বড় ভাই ধীরেশ চন্দ্র মজুমদার মারা গেছেন হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪০ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘বিএফডিসি রেডি টু কুক ফিশ’ হস্তান্তর বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় কৃষককে গুলি করে হত্যা পূবালী ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৩০.৮৩ শতাংশ রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী ব্যাংকের হজ বুথ উদ্বোধন অধিকাংশ অভিযোগই স্বীকার করেছে মিল্টন : ডিবি প্রধান উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে: ইসি আলমগীর ভারত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল হামাস সংঘাত রাফার হাসপাতালগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে

রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকটের মুখে বাংলাদেশ!

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহয়াতা দেয়ার ব্যাপারে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ কমে যাচ্ছে৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-র নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ৷

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর খবরে বলা হয়েছে, ইতালিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেছেন,‘‘ রোহিঙ্গাদের খাওয়ানোর ব্যাপারে দাতা সংস্থার আগ্রহ কমে যচ্ছে ৷

তবে আমরা জাতিসংঘের ব্যবস্থার আওতায় দাতা সংস্থার মধ্যে এই আগ্রহটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু এটি চালিয়ে যাওয়া ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে৷”  বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ১২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ডেভিড বিসলেকে উদ্ধৃত করেন৷

তিনি মনে করেন,‘‘রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মানবিক সংস্থাটি বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে৷”

পররাষ্ট্র সচিব জানান, ডাব্লিউএফপি বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে৷

তিনি বলেন, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের খাবার বিতরণ করেছে ডাব্লিউএফপি ৷ প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করতে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়ে বলেও জানান তিনি৷

শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরেকটি বিষয়য়ের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ডাব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক, সেটি হচ্ছে, বর্ষকালে বাংলাদেশের যে স্থানে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে ভূমিধসের সৃষ্টি হতে পারে৷”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘প্রয়োজন হলে রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে অস্থায়ীভাবে ভাসানচর এলাকায় স্থানান্তর করা হবে৷”

ডাব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রচারণার প্রশংসা করেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে ইতোমধ্যে দু’বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছি৷”

_99691712_mediaitem99691711

ডাব্লিউএফপি মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অত্যাচারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে৷

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বশেষ অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে  রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তুলে ধরা ৫টি পয়েন্টেরও পুনরোল্লেখ করেন৷

ডেভিড বিসলেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে সফল প্রত্যাবাসনে জন্য ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং এই চুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ করেছে৷”

শহীদুল হক বলেন ,‘‘তিনি আশ্বস্ত করেন যে, ডাব্লিউএফপি বাংলাদেশের সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে৷”

এদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক গবেষণায়  সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে, মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিদিন যদি ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়, তাহলে সময় লাগবে সাত বছর৷ মূল্যস্ফীতি ও জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি বাদ দিয়ে বিদ্যমান রোহিঙ্গাদের পেছনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত খরচ করতে হবে ৪৪৩ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা৷ জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধিকে বাদ দিয়ে মূল্যস্ফীতি যোগ করে প্রতিদিন যদি ৩০০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো হয়, তাহলে সময় লাগবে আট বছর ৷

অর্থাৎ ২০২৬ সাল নাগাদ রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ করতে হবে ৫৯০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা৷ জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধিকে বাদ দিয়ে মূল্যস্ফীতি যোগ করে প্রতিদিন যদি ২০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে সময় লাগবে ১২ বছর৷ সেক্ষেত্রে ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের পেছনে খরচ হবে এক হাজার ৪৫ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা৷

সিপিডির হিসাব মতে, আগামী জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সাত হাজার ৪০ কোটি টাকা৷ সিপিডি বলেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প তৈরির কারণে ছয় হাজার একর বনের জমি উজাড় হয়েছে৷ সিপিডির হিসাবে এর আর্থিক মূল্য ৭৪১ কোটি টাকা৷

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে সিপিডি হিসাব করছে, আগামী বছরের জুন পর্যন্ত  রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা জরুরি, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ৷ এছাড়াও এই পরিমাণ অর্থ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক ০৩ শতাংশ এবং মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ৷

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এবং দাতা সংস্থা রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এখন ঠিক বুঝতে পারছেন না সাহায্যটা কিভাবে এবং কোন খাতে দেবেন৷ তারা ফোকাস নির্ধারণ করতে পারছেন না৷ আর জাতিসংঘের মাধ্যমে দিলে সব টাকা বা সহায়তা যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা পাবেন, তা নয়৷ জাতিসংঘ দেশকে নয়, ভালনারেবল গ্রুপকে দেয়৷ এখানে প্রক্রিয়াগত একটা সমস্যা আছে৷ তাই এটা সত্য যে, দাতারা বিছুটা পিছিয়ে গেছেন৷”

40480266_303

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলাদেশকে অনেক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের পুশতে হবে৷ তাই দাতাদের সহায়তার পিছনে না ছুটে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তিতে রোহিঙ্গা বিষয়টিকে নিয়ে গিয়ে সুবিধা নেয়৷ আর সেই সুবিধার অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা৷ যেমন, বিশ্বব্যাংক তাদের একটা প্রকল্পের সূদ মওকুফ করে দিক৷ সেই টাকা আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করতে পারি৷”

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সময়ে বিশ্বে তিনটি জায়গায় শরণার্থীদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে৷ রোহিঙ্গা ছাড়াও ইরাক এবং সিরিয়ার শরাণার্থীদের নিয়ে দাতারা কাজ করছেন৷ আর বাংলাদেশের চেয়ে ওই দুই জায়গায় শরণার্থী আরো বেশি৷ আমার মনে হয়, দাতারা অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে, সেখানে কিন্তু আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে যুক্ত করা হয়নি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকদিন আগে মাত্র বলেছেন ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে থাকবে৷ মিয়ানমারও কিন্তু তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান জানায়নি৷ তারা রেডক্রসের কথা বলছে৷ ডোনাররা দিয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ সহায়তাও অনেক৷ তারপরও এটা কতদিন? আর দাতাদের আগ্রহ কমে গেলে এই চাপ বাংলাদেশের জন্য নেয়া কঠিন হবে৷”

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তের দাবি: রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য নৃশংস অপরাধ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে নির্দেশ দিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ফোরটিফাই রাইটস৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে সংগঠনটি এ আহ্বান জানায়৷ নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে৷ ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের এই পদক্ষেপ নিতে এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি৷ চলমান জঘণ্য অপরাধের জন্য মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ বিলম্বিত হলেও অনিবার্য হয়ে পড়েছে৷”

জাতিগত নিধনের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করুন:

মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে  ‘জাতিগত নিধন’-এর জন্য দায়ী এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তুলে ধরেন৷  মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো ‘জাতিগত নিধন’কে অব্যাহতভাবে অস্বীকার করার বিষয়টিকে বাস্তবতাবিবর্জিত বলেও অভিহিত করেন তিনি৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের উচিত অং সান সুচি’র কাছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া এবং দেশটিতে ঘটে চলা বীভৎস সব ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশে চাপ প্রয়োগ করা৷”

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:ডয়চে ভেলে/বিএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com