বাংলা৭১নিউজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি যেভাবে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ চলছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
সোমবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একটা ক্ষুদ্র জাতির ওপর এ রকম নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরে ঘরে আগুন সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত।’
রোববার উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ঘুমন্ত মানুষের প্রতি বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে, মেয়েদের তুলে নেয়া হয়েছে, সেটি গণহত্যার শামিল।’
এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে জানানো হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক মহল রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তবুও মিয়ানমার দমন-পীড়ন বন্ধ করছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতোমধ্যে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে কক্সবাজারে বসতি করেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট সাত-আট লাখ রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছে।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘বিপুল রোহিঙ্গার এত বড় বোঝা বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তবুও মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ, ওআইসি, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তৎপর করতে হবে। আসিয়ানের দুই প্রভাবশালী সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সক্রিয় হয়েছে। ভারত ও চীনকে কাজে লাগিয়ে তাদের বোঝাতে হবে। এতকিছুর পরও যদি কোনো কাজ না হয়, তাহলে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো- কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রয়োগ, রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা যারা করেছে, তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা এবং ঢুকেপড়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন। নইলে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়বে। তখন জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ারুল নাসের প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস