বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু বিএনপির নয় আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ ছাড়ছেন : রিজভী মামলা হলে মিল্টনের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হবে : ডিবি প্রধান হারুন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ইউক্রেন যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ঘর সামলাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে ৫১ বছরের রেকর্ড ভাঙলো দাবদাহ, তাপমাত্রা ছাড়ালো ৪৭ ডিগ্রি ৫ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে শুক্রবার স্কুল খোলা না বন্ধ, জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনকে তাদের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে: খামেনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য খাতে সমন্বিত নেতৃত্বের আহ্বান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের রাজবাড়ীতে লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধার, ৩ ঘণ্টা পর যোগাযোগ স্বাভাবিক ঢাকায় পরিবহনে চাঁদাবাজি, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ১১ জাতির পিতার সমাধিতে আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতিদের শ্রদ্ধা প্রতীক নিয়ে আজ থেকেই ১৮ দিনের প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা ওমরা পালনে সস্ত্রীক সৌদি যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল

‘যুদ্ধদিনের প্রধানমন্ত্রী’ তাজউদ্দীন আহমদের ৯১তম জন্মদিন আজ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এর ৯১তম জন্মদিন আজ। ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্ম এই বরেণ্য রাজনীতিকের।

বাবার নাম মৌলভি ইয়াসিন খান আর মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খানম। তাজউদ্দীন আহমদ চার ভাই, ছয় বোনের মাঝে চতুর্থ ছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বরের টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কাহিনী রচিত হয়েছিল। সেখানে তাকে বর্ণনা করা হয়েছিল ‘যুদ্ধদিনের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা।

শৈশবেই তাজউদ্দীন আহমদেও মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ১৯৪৪ সালে অবিভক্ত বাঙলায় দ্বাদশ স্থান লাভ করেন তিনি । এ সময়ই জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে। নির্বাচনে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

একই বছর কোলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ভালো পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় ছিলো উচ্চ মাধ্যমিকেও, ঢাকা বোর্ডে অর্জন করেন চতুর্থ স্থান এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশে ছিলো এ দেশীয় রাজনীতির প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশ তাজউদ্দীন আহমদকে দেশ ও রাজনীতি নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। জড়িয়ে যান সক্রিয় রাজনীতিতে। পূর্ব বাঙলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের উদ্যোক্তাদের একজন।

ভাষা আন্দোলনেও তাজউদ্দীন ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। ১৯৪৮-এর ১১ এবং ১৩ মার্চ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ধর্মঘট-কর্মসূচি ও বৈঠক করেন। ২৪ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারাসহ বৈঠকও করেন।

১৯৫৩ সাল। ‘আওয়ামী মুসলীম লীগ’ দলের কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুসলিম’ শব্দটি দলের নাম থেকে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এ সময়ই আওয়ামী লীগে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মাঝে সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর-পূর্ব আসনে যুক্তফ্রন্টপ্রার্থী হন তাজউদ্দীন। প্রতিপক্ষ মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ নেতা ফকির আব্দুল মান্নানকে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন। তখন তার বয়স মাত্র ২৯ বছর।

স্বায়ত্বশাসন আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম প্রধান সারথি ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ফলে ১৯৬২ সালে গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক হন আওয়ামী লীগের।

ঐতিহাসিক ছয় দফার ১৯৬৬ সালে হন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৬ সালের ৮ মে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন তাজউদ্দীন। মুক্ত হন ১৯৬৯-এর ১২ ফেব্রুয়ারি। অনিবার্যভাবে সংঘাতময় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব গঠিত পাঁচ জনের হাই কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তাজউদ্দীন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত। বাঙালি জাতির উপর নেমে আসে পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয়, বীভৎস, খড়গহস্ত। এ বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

তাজউদ্দীন এসময় স্বাধীন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। ভারত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। জরুরি হয়ে পড়ে একটি সরকার গঠন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করেন ও ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বদ্যিনাথ তলার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করেন।

শত বাধা বিপত্তির মাঝে তিনি প্রবাসী সরকার চালিয়ে যেতে থাকেন। গঠন করেন প্রশাসনিক কাঠামো, এমনকি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, একই সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তাই যুদ্ধের সাংগঠনিক পরিকল্পনাও করতে হচ্ছিল তাকে।

সঠিকভাবেই এগোতে থাকে সবকিছু। ভারত স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে বাঙালি মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়। প্রচন্ড আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়।

১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি তাজউদ্দীন এক টিভি ভাষণে বলেন-‘৩০ লক্ষাধিক মানুষের আত্মাহুতির মাঝ দিয়ে আমরা হানাদার পশুশক্তির হাত থেকে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত বাঙলাদেশকে স্বাধীন করে ঢাকার বুকে সোনালি রক্তিম বলয় খচিত পতাকা উত্তোলন করেছি’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন নয়া সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী। ১৯৭৩-এ ঢাকা-২২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এতোদিন যিনি সংগ্রাম করেছেন দেশ স্বাধীনের জন্য এখন তিনি সংগ্রামে নামেন দেশ গঠনের।

১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনের বক্তৃতায় দল, সরকার এবং নেতা ও কর্মীদের মাঝে দূরত্ব দূর করে, সংগঠন এবং সরকারের মাঝে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান তাজউদ্দীন।

এ সময় কিছু সুবিধাভোগী, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিকদের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগও করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়৷ এ ভয়াবহ রূঢ়, নৃশংস ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত। ঘটনার বীভৎসতায় তাজউদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন,‘বঙ্গবন্ধু জেনেও গেলেন না তার শত্রু কে আর বন্ধু কে? তিনি বন্ধুকে চিনতে পারলেন না’।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সবাই তাজউদ্দীন আহমদকে আত্মগোপনে যাবার জন্য বলতে থাকেন। কেননা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে পরবর্তী লক্ষ্য হবেন তার কাছের মানুষেরা। কিন্তু তিনি আত্মগোপন করতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সবার আশঙ্কাই সত্য হয়। ১৫ আগস্ট প্রথম গৃহবন্দী ও পরে ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ৩ কন্যা, ১ পুত্রসহ স্ত্রীকে ছেড়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে।

কারা অন্তরীণ হন তিনিসহ আরো তিন জাতীয় নেতা। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম. মনসুর আলী, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান। কারাগারে সেনা সদস্যদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তার কাছে আর কারাগারকে নিরাপদ মনে হয় না। শঙ্কা সত্য হয়।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর অস্ত্রের দমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয় ৪ নেতার জীবন ও শরীর। নিহত হন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার কাণ্ডারীরা। নিহত হন তাজউদ্দীন আহমদ।

বাংলা৭১নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে তাজউদ্দীন আহমদকে জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা৭১নিউজ/এসএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com