বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিয়াসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে। বুধবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ রায় দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর সাবেক বিশেষ জজ মো. আবু আহমেদ জমাদার। নবগঠিত এই ট্রাইব্যুনালে এটিই প্রথম রায়।
১৬৬ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া হয়। রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারিক প্যানেলের সদস্য মো. আবু আহমেদ জমাদার, দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি আমির হোসেন এবং দণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত তিনটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। ছয় আসামিকে প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অপর দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। ট্রাইব্যুনাল পলাতকদের গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের দ্বিতীয় দফা যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২৩ অক্টোবর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার শুরুর পর এটি ২৯তম রায়।
আজিজ ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মো. আবদুল লতিফ, আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুর রহিম মিঞা। এর মধ্যে আবদুল লতিফ ছাড়া অন্যরা পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামিরা তাদের এলাকাকে নেতৃত্বশূন্য করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ (চেয়ারম্যান-মেম্বার) মোট ১৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি আরও বলেন, গত ৯ মে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন। বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে গত ১১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নবগঠিত ট্রাইব্যুনালে মামলাটির পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়।
আসামিদের মধ্যে কারাবন্দী লতিফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খন্দকার রেজাউল এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। আজিজ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ২৮ জুন এই ছয় আসামির বিচার শুরু হয়।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস