বাংলা৭১নিউজ, মাদারীপুর প্রতিনিধি: দুই বাংলার প্রখ্যাত কবিয়ালদের পরিবেশনায় মাদারীপুরে অনুষ্ঠিত হলো ৩দিনের কবিগানের জমজমাট আসর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লোক সঙ্গীত শিল্পীদের অংশগ্রহণে ৩ দিনব্যাপী কবিগান শুরু হয় বৃহস্পতিবার।
কবি সম্রাট অসিম সরকার ও অমল সরকারের সুরে ও তালে মুগ্ধ হয়ে গান উপভোগ করেন হাজারো দর্শক-শ্রোতা। মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর স্কুল মাঠে কবিগানের আয়োজন করেন স্থানীয় ৫ গ্রামের লোক সঙ্গীত প্রিয় যুব-সম্প্রদায়। কবিগানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও উদ্দোক্তা ছিলেন কমলেশ ভক্ত।
বাঙালি লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ কবিগান। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া কবিগানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের উদ্দোগে এ কবিগানের আয়োজন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মনোমুদ্ধকর এ আয়োজন দেখে কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ চট বিছানো মাটিতে বসে মুগ্ধ হয়ে শুনলেন দুই বাংলার কবিয়ালের কবিগান। কবিগানের উৎসবকে দর্শকদের কাছে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলতে আধা কিলোমিটার এলাকা জুঁড়ে আলোকসজ্জায় বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। স্কুল মাঠে বসেছে হরেক রকম পসরা দিয়ে সাজানো মেলা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা শ্রোতা কলেজ ছাত্র সুজিৎ কুমার বলেন, ‘বাংলা লোক সঙ্গীতের মধ্যে লালন, বাউল, ভান্ডারী, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, কীর্তন, কবিগান, যাত্রাপালা, শ্যামা সঙ্গীত আমার খুবই প্রিয়। এসব গানের আসর বসলেই আমি ও আমার বন্ধুরা সেখানে যাই। এখানে এসে ভারতীয় শিল্পীদের সুরে কবিগানের তর্ক-বিতর্কের যুদ্ধ আর কবিতার ছন্দে গান শুনে অনেক ভালো লেগেছে।’
যতিন সরকার বলেন, ‘সময়ের সাথে সাথে কবিগানের সকল দৃশ্য যেন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু শিকড় সন্ধানী কিছু মানুষ এখনও এ কবিগানকে খুঁজে বেড়ায়। হারিয়ে যাওয়া এ স্মৃতির কিছুটা হলেও আনন্দ দিয়েছে।’
কবিগানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কমলেশ ভক্ত বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই কবিগান শুনতে পছন্দ করে। বাবার স্বপ্ন ছিল বড় আসর করে কবিগানের উৎসব করা। কিন্তু বাবা এখন জীবিত নেই। তাই আমি পাঁচ গ্রামের যুবকদের নিয়ে সবার সহযোগিতায় এ কবিগানের আয়োজন করেছি। এর আগে এখানে এমন উৎসব হয়নি। ভারত থেকে প্রখ্যাত কবিয়াল অসিম সরকার ও অমল সরকারসহ ১৩ জনের একটি দল আমাদের এখানে তিনদিন ব্যাপী কবিগান পরিবশেন করছেন।’
কবি সম্রাট কবিয়াল অসিম সরকার বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এর আগেও বহু অঞ্চলে এই কবিগানের উৎসব করতে এসেছি। কবিগান আমার প্রাণ। আমি মনে প্রাণে এই গানের উৎসব করে থাকি। বাংলা- দেশের মানুষ অমায়িক। তাদের এই আগমনই প্রমাণ করে দেয় যে তারা আমাকে ও আমার গানকে কত ভালোবাসে। আমি এপার বাংলায় এসে সত্যি মুগ্ধ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস