বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।
একই সঙ্গে এই রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশে এসে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান পোপ ফ্রান্সিস।
এর আগে বিকাল ৩টায় ঢাকায় পৌঁছে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
সেখান থেকে যান বঙ্গভবনে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে তিনি বক্তব্য দেন।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, গত কয়েক মাসে রাখাইন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উদার মন এবং অসাধারণ সংহতির পরিচয় দিয়েছে।
মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে পোপের অবস্থানকে ‘প্রশংসনীয়’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ক্যাথলিক ধর্মগুরুর এই অবস্থান সঙ্কট সমাধানে আশা দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মমত্ববোধ, তাদের সাহায্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পোপের আহ্বান বিশ্ব সম্প্রদায়কে নৈতিক বাধ্যতা দেয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে পোপকে বহনকারী বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর বিকাল ৩টা ৩ মিনিটে পোপকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পরে বিমানবন্দরে পোপ ফ্রান্সিসকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পোপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিকালে ক্যাথেড্রাল পরিদর্শন করবেন এবং রমনায় প্রবীণ যাজক ভবনে পোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশপদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তারপর আর্চ বিশপ হাউসের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমাণ্ডলিক সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন।
পোপ তার সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসা ভবন ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করবেন। তার পর তেজগাঁও গির্জায় যাজকবর্গ, ব্রাদার-সিস্টার, সেমিনারিয়ান ও নবিশদের সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তিনি তেজগাঁওয়ে পুরনো গির্জা পরিদর্শন করবেন।
বিকালে নটর ডেম কলেজে যুব সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখবেন।
শনিবার ৫টার দিকে রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফরকালে পোপ লা মেরিডিয়ান হোটেলে থাকবেন। ওই হোটেলে বিশাল মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পোপের সফর কভার করার জন্য প্রায় ৩০০ বিদেশি সাংবাদিক ঢাকায় রয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পোপের এবারের ঢাকা সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে ভ্যাটিকান থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তখন তিনি রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তিনি মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেন। মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ করেননি তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস