বাংলা৭১নিউজ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হারিন্দা এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী এমরান মোল্লা (২৫) কে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা বালুর টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরেই হাত-পা ও গলা কেটে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় নিহত এমরান মোল্লার বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা বাদী হয়ে ৭ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সকালে হারিন্দা এলাকার কোট বাড়ির গোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর মাছের ঘেরের ঝোপ থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই লাশটি এমরান মোল্লার লাশ বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। নিহত এমরান মোল্লা উপজেলার হারিন্দা এলাকার মৃত আব্দুল মবিন মোল্লার ছেলে। এমরান মোল্লা স্থানীয় আব্দুল হক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়–য়া শিক্ষার্থী।
রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জোবায়ের জানান, ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হারিন্দার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন এমরান মোল্লা। যথাসময়ে বাড়িতে ফিরে না আসার কারনে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে না পেয়ে গত ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। ডায়েরী করার পর পুলিশ আশ-পাশের থানাসহ বিভিন্ন স্থানে এমরান মোল্লার বিষয়ে ম্যাসেস দেয়া হয়। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী সকালে হারিন্দা এলাকার কোট বাড়ির গোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছ ধরার সময় মাছের ঘেরের খুটি উঠাতে গিয়ে একটি পঁচা-গলা লাশ ভেসে উঠে। ওই লাশটি এমরান মোল্লার লাশ বলে সনাক্ত করেন বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা। গলিত লাশের সঙ্গে মাথার কোন অস্তিত্ব নেই। কাঁধ হতে দুই হাত নেই। নেই হাটুর নিচ থেকে দুই পাঁ। লাল ও কালো বৈদ্যুতিক তাঁর দিয়ে বাঁধা ছিলো। পরে পুলিশ লাশটি ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ও ডিএনও টেস্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে, এ ব্যপারে নিহত এমরান মোল্লার ভাই মোস্তফা মোল্লা বাদী হয়ে ৭ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীর পারের হারিন্দা এলাকায় ওমেরা ফুয়েল নামে একটি প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। আর জমি ক্রয়, জবরদখল ও বালু ভরাট কাজে সহযোগীতা করতে একটি বাহিনী রয়েছে। ওই বাহিনীতে নেতৃত্বে রয়েছে, হারিন্দা এলাকার ফটিক মিয়ার ছেলে সজীব মিয়া, দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রমজান, হরজু মিয়ার ছেলে দোহাই, নুর মোহাম্মদের ছেলে মিছির আলী, দুলাল মিয়া, আবু সাঈদের ছেলে রাজিব মিয়া, পিতলগঞ্জ এলাকার মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে রাজিব হোসেন। সঙ্গে রয়েছে নিহত এমরান মোল্লাও। এরা সকলেই ইয়াবাসক্ত। প্রায় সময়ই তারা হারিন্দা এলাকার কোট বাড়ির গোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ইয়াবা সেবন করে আড্ডা মারতো।
মামলার বাদী মোস্তফা মোল্লা জানান, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল হত্যাকারীদের আড়াল করতে ও হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নিখোঁজের মাস খানেক আগেও ওমেরা ফুয়েল কোম্পানির বালু ভরাটের বিলের টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দুলাল, রমজান সজীবসহ তাদের লোকজনের সঙ্গে এমরান মোল্লার বাকবিতন্ডা ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এছাড়া নিখোঁজের পর সুরিয়াবো এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন (বর্তমানে জেল হাজতে) তাদের জানিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা এমরান মোল্লাকে হত্যার পর গুম করার উদ্দেশ্যে ৩ টুকরা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে পুতে রাখা হয়েছে। এরপর পুলিশসহ তারা নদীর বিভিন্ন স্থানে খুজেও পায়নি। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরাই বালুর টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরেই হাত-পা ও গলা কেটে হত্যা করেছে বলে মোস্তফা মোল্লাসহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
মা মফিজা বেগম জানান, হারিন্দা এলাকার কোট বাড়ির গোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা পাড়ে সব সময় ওই বাহিনীর সদস্যরা আড্ডা মারতো। সেখানেই তার ছেলে এমরান মোল্লার লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এমরানকে নেশার জগতে ঢুকিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে এরাই।
স্থানীয় হারুন মোল্লা ও সানাউল্লাহ মোল্লা জানান, তারা শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছের ঘের থেকে মাছ ধরতে গিয়ে একটি গাছের ঢাল টানতেই লাশটি ভেসে উঠে। ধারনা করা হচ্ছে, পানির তলে খুটি গেড়ে, ওই খুটিতে বেঁধে রাখা হয়েছিলো গুম করার উদ্দেশ্যে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, এ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবাজী, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এ বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পর থেকেই এদের এলাকায় দেখা যাচ্ছেনা। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হয়ে যাবে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ কাজ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস