শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
‘ইসরায়েলগামী’ ৩ জাহাজে হুথির ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সিআইপি হলেন প্রাণ-আরএফএলের তিনজনসহ ১৮৪ ব্যবসায়ী হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত, আহত ৫০ জুয়া ও হুন্ডির কারণে মুদ্রাপাচার বাড়ছে: অর্থমন্ত্রী একনেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিতে প্রভাব পড়বে না: সালমান এফ রহমান খোলাবাজারে ডলার ১২৫ টাকা মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ খাদ্যমন্ত্রীর বড় ভাই ধীরেশ চন্দ্র মজুমদার মারা গেছেন হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪০ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘বিএফডিসি রেডি টু কুক ফিশ’ হস্তান্তর বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় কৃষককে গুলি করে হত্যা পূবালী ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৩০.৮৩ শতাংশ রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী ব্যাংকের হজ বুথ উদ্বোধন অধিকাংশ অভিযোগই স্বীকার করেছে মিল্টন : ডিবি প্রধান উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে: ইসি আলমগীর ভারত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল হামাস সংঘাত রাফার হাসপাতালগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে

বন্যায় ভেসে গেছে পুকুর, ঋণ আতঙ্কে মৎস্যচাষিরা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

নেত্রকোনায় বন্যায় ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। এতে কপাল পুড়েছে জেলার মৎস্যচাষিদের। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করায় এখন কিভাবে সেই টাকা শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঋণ আতঙ্কে অনেকের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ১০ উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ওই সময় ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সোয়া লাখ বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে নেত্রকোনা সদরের ১ হাজার ৪৬৮ জন খামারির ৩২৫০টি পুকুরের মাছ, মোহনগঞ্জের ১ হাজার ৭২৩ জনের ২ হাজার ৪০টি পুকুর, বারহাট্টার ১ হাজার ৭২২ জনের ৩ হাজার ৬৮৭টি পুকুর, কেন্দুয়ার ১ হাজার ১৬০ জনের ২ হাজার ২৩৫টি পুকুর, আটপাড়ার ৯৩৫ জনের ১ হাজার ৬৭০টি পুকুর, পূর্বধলার ৬৮৫ জনের ৭৬৪টি পুকুর, মদনের ১ হাজার ৫৫২ জনের ৪ হাজার ২৪৫টি পুকুর, খালিয়াজুরীর ৩৯১ জনের ৪১৪টি পুকুর, কলমাকান্দার ২ হাজার ৩৪০ জনের ৩ হাজার ১১২টি পুকুর, ও দুর্গাপর উপজেলার পাঁচ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ আরও জানায়, মোট ৩ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর/জলাশয়ের ১৫ হাজার ৮২৬ জন খামার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এদিকে, মৎস্যচাষিরা মাছ ভেসে যাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। খামারিরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন বুনেছিলেন তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবেন এবং তাদের ঋণ শোধ হবে। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেছে তাদের স্বপ্নও। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও এর ক্ষতচিহ্ন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন মৎস্য চাষিরা। এর মধ্যেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ঝুলে আছে ঋণের বোঝা। তারা এখন বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে এই ঋণ শোধ করবেন।

জেলার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের নিপা এগ্রো ফিশারিজের সত্ত্বাধিকারী মো. রোকনুজ্জামান খান খোকন জানান, তিনি ৭০ কাঠার পুকুরে পাবদা, তেলাপিয়া, শিং, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করেছিলেন।

মাছ প্রায় বিক্রির উপযোগীও হয়ে উঠেছিল। বিক্রি শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। আশা করেছিলেন প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ও পোনা বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই আকস্মিক বন্যায় সব মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের চারপাশে কলা ও সবজি চাষ করেছিলেন।

সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন ১২ লাখ টাকা। ভেবেছিলেন মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এখন ভেবে পাচ্ছেন না কিভাবে এই ঋণ শোধ করবেন।

মৎস্য খামারি মো. আরিফুর রহমান ও মোখলেছুর রহমান মিলে বাউসি, আসমা ও সাহতা ইউনিয়নে মোট ৩৪ একর পুকুরে পাবদা, গুলশা, তেলাপিয়া, শিং, রুই, কাতলা ও সিলভার মাছের চাষ করেছিলেন। তারা জানান, কিছু কিছু মাছ তারা বিক্রি শুরু করেছিলেন।

তবে দুই কোটি টাকার ওপরে মাছ বন্যার কারণে খামার থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা এখন প্রায় নিঃস্ব। ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফা ব্যাংক থেকে মাছ চাষের জন্য তারা ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এই ঋণ তারা কবে কিভাবে শোধ করতে পারবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

বারহাট্টার বাউসি ইউনিয়নের আরেক মৎস্যচাষি মো. ইলিয়াছ তালুকদার বলেন, আমরা এখন ঋণের আতঙ্কে আছি। সব শেষ হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম ঘুরে দাঁড়াবো। সে আশা তো এখন বাদ। কিভাবে কী যে হবে! কৃষি ব্যাংক থেকে ১১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ব্যক্তি পর্যায়ে অন্য জায়গা থেকেও ঋণ নিয়েছি। মোট ৩০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। বন্যার কারণে সব মাছ পুকুর থেকে বেরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পাঁচটি পুকুরে তেলাপিয়া, পাবদা ও গুলশা মাছ চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম বিক্রি করে ঋণ শোধ করে লাভবান হবো। এখন দেখছি, ঋণ শোধ করতে করতেই জীবন পার করতে হবে। ঋণ শোধের আতঙ্কে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।

ইলিয়াছ তালুকদার আরও বলেন, ব্যাংক যদি বর্তমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ দেয় তাহলে খুব ভালো হতো।

জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর জানিয়েছেন, বন্যার কারণে জেলার ১৫ হাজার ৮২৬ জন মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোট ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com