বাংলা৭১নিউজ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরার বহুলালোচিত পঞ্চাশোর্ধ জীবন মাষ্টার এখন বয়স কম দেখিয়ে ৮ম শ্রেণির মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে জেডিসি পরীক্ষার্থী অর্থাৎ এখন ১৫ বছরের শিশু। তিনি কখনো পীর সাহেব, কখনো হাকিম, কখনো পাশের গ্যারান্টিসহ ইংরেজি প্রাইভেট পড়ান।
বিচিত্র চরিত্রের এই প্রতারক বর্তমানে আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসার জুনিয়র দাখিল (৮ম শ্রেণীর) ছাত্র। তার রোল নং ২৭২৭০০, রেজি: নং ১৭১৮৭৯৫৫৫৩, জন্ম তারিখ: ১৫-১০-২০০২ ইং। তিনি গুনাকরকাটি খায়রীয় আজিজীয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের জেডিসি পরীক্ষার্থী। নাম দিয়েছেন আবু আইয়ুব আনছারী। তাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে এখন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠছে। ১৫ বছর বয়সী কে এই আবু আইয়ুব আনছারী? কি তার আসল পরিচয়?
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তার জীবনের কিছু গোপন রাখা তথ্য। ৫০ উর্ধ্ব বয়সের আবু আইয়ুব বহু শিক্ষকেরও শিক্ষক। সাতক্ষীরা শহরের সর্বত্র আলোচিত এই জীবন স্যার। তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কখননো প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে তার বাড়িতে পুলিশ যায়। প্রাইভেট শিক্ষক জীবনের ভিজিডিং কার্ডে লেখা আছে তিনি একাধারে আল কুরআনের গবেষক, অভিজ্ঞ ইংলিশ শিক্ষক, পীরে কামেল, মুফতী, কারী, হোমিও-হারবাল চিকিৎসক এবং ধর্মীয় আলোচক। তিনি আবার ইংরেজি প্রাইভেট পড়ান। জেল্রা কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে জীবন মাষ্টার বহু দিন থেকে সাতক্ষীরাতে অবস্থান করে রমরমা প্রাইভেট বাণিজ্য করে আসছেন।
জীবন মাষ্টার জেডিসি পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ভারতের মুর্শিদাবাদ পীর সাহেব আলিম উদ্দীন (রহঃ) এর কথামতো কাদাকটি দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তিনি আরো জানান, শিক্ষার শেষ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে এইচ এস সি পরীক্ষার আগের দিন রাতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকার কারণে পুলিশের তাড়া খেয়ে তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এলাকার সচেতন মহলের ধারণা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারণে কেন্দ্রের ২৯০ জন শিক্ষার্থীকে অনৈতিকভাবে সাহায্য করার জন্য তাকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হচ্ছে।
দরগাহপুর সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আগে এভাবে ভাবিনি। একটা ঘটনা তো ঘটেই গেছে। এখন কি করা যায় তাই ভাবছি।
গুনাহকরকাটি খায়রীয়া আজিজীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও: নূর ইসলাম জানান, জীবন স্যারের শুধুমাত্র জন্ম সালটা ভুল হয়ে গেছে। বোর্ডে কথা হয়েছে সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
কেন্দ্র সচিব নৈকাটি দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ শেখ ইমদাদুল হক জানান, জেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারকে জন্ম তারিখ এবং বয়সের পার্থক্যের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। ওনারা বলেছেন কাগজপত্র ঠিক থাকলে তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হোক!
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকী বিল্লাহ জানান, বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে, আমি অফিসে যেয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস