বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, দেশ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য নদী বাঁচাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীগুলোকে বাঁচাতে সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। দেশ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য নদী বাঁচাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে ‘কম্প্রিহেনসিভ প্লান ফর স্টাবিলাইজেশন অব দ্য যমুনা-পদ্মা রিভার এন্ড পাইলট ইন্টারভেনশন ফর ল্যান্ড রিকেলামেশন’-এর ওপর এক মডেল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বক্তৃতা করেন। এতে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নদীগুলোর ন্যাব্যতা বৃদ্ধি- নদী থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এজন্য তিনি নদীগুলো থেকে অধিক উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে নজর দিতে বলেন।
নদীকে দেশের জীবন প্রবাহ হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তীরে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে সভ্যতার সব কিছুই গড়ে উঠেছে নদীর তীর ভূমিতে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক নদী- নৌপথ হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে ভাল রুট। নদীগুলো থেকে লাভবান হওয়ার আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। নদীর জমি পুনরুদ্ধার হলে দেশ আরো উন্নত হবে। আমরা পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে কল-কারখানা গড়ে তুলে বসতি সম্প্রসারণ করতে পারি।
তিনি বলেন, ভূমি পুনরুদ্ধারের সুবাদে বিনিয়োগ ও কৃষি জমি বাড়বে এবং দারিদ্র্য নির্মূল হবে। এজন্য এই নদী সম্পদকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, নদী দেশের জীবন প্রবাহ হলেও নদী খনন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে তা অনেক সময় দুর্দশা বয়ে আনে। এজন্য প্রথমে আমাদেরকে মূল ড্রেজিং এবং পরে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ড্রেজিং করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। স্বাধীনতার সময়ের ৭ কোটি মানুষ আজ ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের খাদ্য, বাসস্থান ও যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, খর¯্রােতা ও বড় নদীগুলোর গভীরতা ধরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা ব্যাপক ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারলে একটি বাফার জোন গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কারো শরীরে ব্লক দেখা দেয় তবে রিং স্থাপন বা অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, নদীগুলো বাঁচানোর জন্য তেমনিভাবে ড্রেজিং-এর প্রয়োজন। নদী রক্ষায় আমরা ভালো সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বছরের পর বছর নদীগুলো ড্রেজিং করা হয়নি, আর এর কারণে শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষার মৌসুমে নদীগুলো প্রশস্ত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর গর্তগুলো সঠিকভাবে সমন্বয় করতে হবে। তিনি বলেন, নদীর দুই পাশে বাফার জোন রাখতে হবে, যাতে বর্ষা মৌসুমে এগুলোতে আরো বেশি পানি ধারণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, নদী ভাঙন থেকে নদীগুলোকে রক্ষায় ব্লক ফেলার ক্ষেত্রে দেখা যায়। কিন্তু পলি কাটার ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ভাঙনের ফলে বিনিয়োগকারীরা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। এরফলে মিল কারখানা স্থাপনের জন্য বাসস্থান স্থানান্তরিত হয়। তাই যদি আমরা নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে এই সমস্যা থাকবে না।
শেখ হাসিনা এসময় এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা যদি জমিগুলো রক্ষা করতে পারি তাহলে বাসস্থান এবং ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান ফর স্টেবিলাইজেশন অফ দি যমুনা-পদ্মা রিভার এন্ড পাইলট ইনভেস্টমেন্ট ফর ল্যান্ড রিক্লেমেশন’-এর আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগবান্ধব জমির প্রয়োজন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ¥া ও যমুনার তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানের ২ শ’ ২০ কিলোমিটার রক্ষা করা হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদী খনন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ৩ শ’ ৫০ কিলোমিটার নদীপথ রক্ষা করা হবে। নদীর প্রস্থ ১৬ কিলোমিটার থেকে ৭/৮ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে এবং এরফলে ১৬ শ’ বর্গকিলোমিটার জমি পুনরুদ্ধার হবে।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ বছরে বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস