বাংলা৭১নিউজ, মো. বদরুজ্জামান খান সবুজ, গৌরনদী প্রতিনিধি: স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার বড়কসবা আবাসন প্রকল্পটি (গুচ্ছগ্রাম) নানা সমস্যায় জর্জরিত পড়েছে। এ আবাসন প্রকল্পের একশত পরিবারের সাড়ে ৫ শতাধিক মানুষ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, গৌরনদী পৌরসভার টরকী বন্দর সংলগ্ন পালরদী নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত বড়কসবা আবাসন প্রকল্পটি। আবাসন প্রকল্পটি নদীর পাড়ে গড়ে ওঠার কারণে প্রচন্ড শীতের প্রকোপে এখানে বসবাসরত নারী -পুরুষ ও শিশুরা কাবু হয়ে গেছে। সরকারী কম্বল পাওয়াতো দুরের কথা, এ যাবত ব্যক্তিগতভাবেও কেউ তাদের কম্বল বা শীতবস্ত্র প্রদান করেননি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আবাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা বিধাবা শেফালী বেগম (৮০), রেবা বেগম (৬০) মায়া বেগম (৫৫),কালাম হাওলাদার (৬৫)সহ কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ”এই শীতে মোরা মরছি না বাঁচছি, কেউ মোগো দ্যাহেনা”। মোরা কম্বল পাইনা, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিডি কার্ড কিছুই পাইনা। ভোডের সময় নেতারা আইয়া কইয়া গেছিল তোমাগোরে সব দিমু। কিন্তু ভোডের পর আর কেউ আইয়া খবর নেয়না। আবাসনের সবকটি ব্র্যাকের ঘরের চালা নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে চালা দিয়ে পানি পড়ে। বাথরুমগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বহু আগেই।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে বড় কসবা আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণের পর মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি। এরপরেও নিরুপায় হয়ে এখানে বসবাস করছেন ভূমিহীন দুস্থ এক শত পরিবারের বিভিন্ন বয়সের সাড়ে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এখানে সুপেয় পানি পানের জন্য পর্যাপ্ত টিউবওয়েল নেই। আবাসন প্রকল্পে বিদেশী অর্থে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হলেও মুসুল্লীদের ওজু করার জন্য কোন টিউবওয়েল নেই। তাই বাধ্য হয়ে আবাসনের মুসল্লীদের পাশের পালরদী নদীতে ওজু করতে হচ্ছে। অত্র আবাসন প্রকল্পে দীর্ঘ এক যুগেও কোন কবরস্থান ও শশ্মান নির্মাণ করা হয়নি। একারণে কোন লোক মারা গেলে তাদের বাধ্য হয়ে দুরবর্তী কোন কবরস্থান বা শশ্মানে লাশ দাফন বা সৎকার করতে হচ্ছে। এখানে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখার জন্য কোন স্কুল নেই। শিক্ষা গ্রহন করতে হলে এখানকার শিশুদের ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হচ্ছে। একারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অধিকাংশ শিশুরা। এখানকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য আবাসন প্রকল্পের চারদিকে এখনও নির্মিত হয়নি বাউন্ডারী ওয়াল। আবাসান প্রকল্পের পুকুরের ২ প্রান্তে ঘাটলা থাকলেও অন্য ২ পাশে ঘাটলা না থকায় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। টরকীর চর থেকে আবাসন প্রকল্পে প্রবেশের প্রধান সড়কটিরও বেহাল দশা। দীর্ঘদিনে এটি মেরামত না করার কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বড়কসবা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের সমস্যা লাঘবের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বড় কসবা আবাসন প্রকল্পের সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম (৪৫) জানান, স্যার সিডোরের সময় আপনারা মোগো কথা পেপারে লেখছিলেন। ওই সময় সেনাবাহিনীরা আইয়া মোগো অনেক সাহায্য দিছিল। হের পরে মোগো খবর কেউ নেয়না। এখানে ৩০ থেকে ৩৫ জন বিধবা ও বয়স্ক নারী থাকলেও তারা বয়স্কভাতা বা বিধবা ভাতা পাননা। কমিশনার, মেয়রের কাছে গিয়া মোগো সমস্যার কথা কই, কিন্ত হেরা কিছুই করেনা
এ ব্যাপারে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মোঃ খাইরুল খান জানান, বড়কসবা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের আমরা সাধ্যমত সাহায্য প্রদান করেছি। এখানে সমস্যা আছে অচিরেই তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে পৌর কাউন্সিলর জানান।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস