বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: সম্প্রতি সিকিম রাজ্যে বাংলাদেশিদের বেড়াতে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ উপলক্ষে চলতি মাসের শেষে ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস পরিষেবা চালু হচ্ছে ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে।
কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধার পর এবার জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি। ১৫ বছর ধরে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত হয়ে ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এবার ওই বেসরকারি পরিবহন সংস্থার উদ্যোগেই বাস চলবে ফুলবাড়ি দিয়ে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, ‘ফুলবাড়ি হয়ে বাস চালানোর ট্রানজিট পারমিট পেয়েছি। ২৬ মে থেকে পরিষেবা চালু হবে।’
‘ট্রানজিট সার্ভিস’ মানে ঢাকা বা শিলিগুড়িতে যে বাসে যাত্রীরা সীমান্তে পৌঁছাবেন, সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আবার তাদের শিলিগুড়ি বা ঢাকার বাসে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। একই বাসে চেপে সরাসরি সীমান্ত পেরোনোর অনুমতি না থাকায় এই ব্যবস্থা।
ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাস চালানোর অনুমতি দেয়ার অন্যতম কারণ, সম্প্রতি সিকিম রাজ্যে বাংলাদেশের নাগরিকদের বেড়াতে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন এই অনুমতি ছিল না। এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের নাগরিকদের সিকিমে বেড়ানোর অনুমতি দেয়ার পরই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়েছে সিকিম এবং দার্জিলিংয়ে।
চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে যে বাসটি যাতায়াত করে তাতে ৩১ জন যাত্রীর বসার জায়গা রয়েছে। সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা। ফুলবাড়ি হয়ে যে বাসটি চলবে, তাতে ঠাঁই হবে ২৮ জন যাত্রীর। চ্যাংরাবান্ধার মতো এখানেও ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা। বাসটি শিলিগুড়ি থেকে ছেড়ে ফুলবাড়ি সীমান্ত চৌকি, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। ভাড়া পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় ১৪০০ টাকা।
এখন কয়েকশ যাত্রী প্রতিদিন নিজেদের মতো করে ফুলবাড়ি লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত বাংলাবান্ধায় চলে আসেন। পরে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকেন তারা। সেই ভিড় সামাল দিতেই এবার ফুলবাড়ি হয়ে বাস পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ফুলবাড়ি হয়ে বাস চালানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কেবল পর্যটকরাই নন, বহু ছাত্রছাত্রী দার্জিলিংয়ে পড়াশোনা করে। চিকিৎসার প্রয়োজনেও বহু লোক আসছেন। ফলে ফুলবাড়ি দিয়ে বাস চালানোর অনুমতি মেলায় হয়রানি কিছুটা কমবে।’
মন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু বাস নয়, যাত্রী ভিড় সামাল দিতে বাগডোগরা থেকে ঢাকা বিমান পরিষেবাও চালু করতে চায় এ রাজ্যের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহনমন্ত্রীর কাছে এই ব্যাপারে আর্জিও জানিয়েছেন। পর্যটন মন্ত্রীর খেদ, ‘বিমান পরিষেবা চালু হলে উত্তরবঙ্গের পর্যটন আরও লাভবান হত। তবে আপাতত বাস পরিষেবা চালু হওয়ায়ও ভালো হবে।’
বেসরকারি পরিবহন সংস্থাটির অবশ্য পরিকল্পনা, ফুলবাড়ি হয়ে বাস চালু হলে এর পরে ঢাকা থেকে সরাসরি গ্যাংটক কিংবা দার্জিলিং পর্যন্ত বাস চালানো শুরু করবে তারা।
সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘চ্যাংরাবান্ধা হয়ে বাস পরিষেবা চালুর পরে ভুটান এবং নেপালগামী পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। এ বছর সিকিমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ঢোকার অনুমতি মেলায় পর্যটকদের স্রোত চলছে সিকিম এবং দার্জিলিংয়ে। সেই কারণেই জুন-জুলাই নাগাদ ঢাকা থেকে সরাসরি গ্যাংটক অথবা দার্জিলিংয়ে বাস পরিষেবার কথা ভাবা হয়েছে।’
উত্তরবঙ্গের ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফোসিন) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ফোসিন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আর্জি জানিয়ে এসেছে। ফুলবাড়ি থেকে বাস চালু হচ্ছে ভালো খবর, কিন্তু আমরা হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশ হয়ে পুরোনো রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার পক্ষে।’
এতে দু’দেশের সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটবে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির উত্তরবঙ্গের অন্যতম কর্তা নরেশ আগরওয়াল বলেন, ‘সিআইআই দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। সেখানে ফুলবাড়ি দিয়ে ঢাকা শিলিগুড়ি বাস চলাচল ভালো পদক্ষেপ।
বাংলা৭১নিউজ/এস.এম