রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টানা ৮ দফা কমার পর ফের বাড়লো সোনার দাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ: আব্বাস আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ এবি ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা রূপালী ব্যাংকের ঢাকা উত্তর বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমাবেশের ডাক ছাত্রলীগের ৮ মের উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিলো মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি সদস্য ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ মৌলভীবাজারে পুলিশের বাধায় ছাত্রদলের মিছিল পণ্ড প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, গ্রেফতার ৭ পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উত্তরায় লেক থেকে দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো : মস্কো খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ১৪ দিন পর ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হাসপাতালের ভবনের ফাঁক দিয়ে পড়ে রোগীর মৃত্যু রোববার থেকে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ

‘উপরের কোনো নির্দেশে যেন বিচার না হয়’

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু বলেছেন, আমি একজন আইনজীবী। আমার বয়স ৬৮ বছর। বিচারের মালিক আল্লাহ। আর আল্লাহর প্রতিনিধি আপনি (বিচারক)। মানুষ যায় (মারা যায়), মানুষ আসে (জন্ম নেয়)। আমি (পিন্টু) আপনি (বিচারক) চলে যাব। কিন্তু এ মামলার রায় থেকে যাবে। আপনার (বিচারকের) প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, উপরের কোনো নির্দেশে যেন এ মামলার বিচার না হয়।

বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নিজের পক্ষে নিজেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে পিন্টু এসব কথা বলেন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।  এদিন পিন্টু তার যুক্তিতর্ক উপস্থান করেছেন। তবে তার পক্ষে অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের যুক্তিতর্ক এখন শুরু হয়নি। এজন্য আদালত আগামী ৬, ৭ ও ৮ আগস্ট এ মামলার পরবর্তী যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেন।

এদিন বেলা দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে আবদুস সালাম পিন্টু নিজেই নিজের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু করেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় তিন নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তিনি বলেন, আমি একজন বাম রাজনীতি ঘরোয়া মানুষ। সারাজীভন মানুষের জন্য কাজ করেছি। ৪০ বছর বয়সেও বিয়ে করিনি। আমার অর্থ সম্পদ নেই। আমার জন্য আমার স্ত্রী আইনজীবীদের কাছে চরকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি অসহায়। পত্র-পত্রিকায় যখন মুফতি হান্নানের (জঙ্গি নেতা) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেখি, তখন আমি সিআইডিতে গিয়েছিলাম। তারা তখন বলেছিলেন, তাদের কিছুই করার নেই। তবে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই, কিছুই হবে না।

তিনি বলেন, মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে রাজসাক্ষীর প্রলোভনে যা আইননত দ্বন্দ্বনীয়। আর মুফতি হান্নানকে নির্মম অত্যাচার করে সেই স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, হরকাতুল জিহাদের ঢাকায় কোনো অফিস নেই। কোনো অস্বিত্ব নেই, অফিসের মালিকের নাম নেই, হোল্ডিং নম্বর নেই। মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের কাছে হরকাতুল জিহাদের অফিস তা প্রমাণ হয়নি। ফলে সেখানে একত্রিত হওয়ার বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অস্তিত্বহীন এক প্রতিষ্ঠানে মিলিত হয়ে তারা (জঙ্গিরা) কিভাবে আমার বাসায় গেলেন (বৈঠক করলেন)? এ মামলায় আমার বাসার কোনো পিয়ন, ছাড়–দার, আমার পিএ, এপিএস, গান ম্যান এবং আশপাশোর কাউকে সাক্ষী করা হয়নি। ঘটনা ঘটানোর স্থান সঠিক নয়। অর্থাৎ প্লেস অব অকারেন্স সঠিক নয়।সাক্ষীরা বলেছে, সকাল ৯টার দিকে আমি বাসা থেকে বের হতাম, সন্ধ্যায় ফিরতাম। আমার স্ত্রী স্কুল মাস্টার। যখন সকাল ৯টার দিকে বের হতাম, তখন মূল কলাপ্সএবেল গেট বন্ধ থাকত। আমি সকালে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ দেইনি। আমার ডিউটি রেজিস্ট্রার ও আমার গাড়ির লক বুক সিজ করা আছে। তাতেও তা প্রমাণ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাসায় আগস্ট মাসে নায়েব, সুপারভাইজর যারা ডিউটিতে ছিলেন তাদের কাউকে সাক্ষী করা হয়নি। যাকে সাক্ষী করা হয়েছে, তিনি আগস্ট মাসে ছুটিতে ছিলেন। আর আমরা কখন একত্রিত হয়েছি সে সময় উল্লেখ নেই। ১৮ আগস্ট কোনো মিটিং হয়নি, আমার বাসায় কেউ আসেনি। ষড়যন্ত্রমূলক আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।

সাবেক এ উপমন্ত্রী বলেন, সরকারি এক সাক্ষী বলেছেন মুফতি হান্নানের কাছে মাওলানা মুনির গ্রেনেড ও টাকা সরবরাহ করেন। তাহলে আমার বাসায় কেন জঙ্গিরা গ্রেনেড ও টাকা নিতে আসবেন? আমাকে জড়িয়ে মুফতি হান্নান যে বক্তব্য দিয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অন্যের দায় আমার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে তিন দিন ধরে রেখেছিল। কিন্তু আমার অবৈধ কিছু পায়নি বলেই তারা ছেড়ে দিয়েছে। অপরাধী হলে অনেকের মতো পালিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। সত্যের পক্ষে থেকে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমি নির্দোষ ব্যক্তি। আমি মুফতি হান্নানকে চিনতাম না। একদিন মুফতি হান্নানসহ কয়েকজনকে কোর্টে (বিচারিক আদালতে) আনা হল। তারা আদালতের ডকে (আসামি রাখার নির্ধারিত স্থান) দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে ডকে রাখেনি। ওই সময় মুফতি হান্নান আদালতের কাছে একটি পৃষ্ঠা চান, আদালত তাকে দুই পৃষ্ঠা কাগজ দেন। তাতে মুফতি হান্নান তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিল। তার হাতের আঙ্গুলগুলো ভেঙে চুরমার আর পো¯্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হতো।

তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে নিয়ে আমার পায়ের আঙ্গুল ছিড়ে ফেলেছিল। দেহটাকেও আঘাতে আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার হয়েছিল। আমার মাথায় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল। কারান্টের চেয়ারে বসিয়ে আমার প্যানিসে কিক মেরে তা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন এনএসআই এর পরিচালক শফিউল্লাহ। তারা আমাকে দিয়ে জোর করে এ হামলায় তারেক রহমান (বিএনপি নেতা) জড়িত আছে বলাতে চেয়েছিল। আমি নির্মম নির্যাতনে সাড়ে পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমার স্ত্রীকে নওগা, ঠাকুরগাঁও ও এখন পঞ্জগড়ে ট্রান্সফার করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অমানবিক জীবন যাপন করছি আমরা। এ সময় তিনি কিছুটা ভেঙ্গে পড়েন। আদালত তাকে পাঁচ মিটিন বিশ্রাম নেয়ার অনুমতি দেন। কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিয়ে পিন্টু ফের যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু করেন।

পিন্টু বলেন, আমার ভাই (অপর আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন) কি করেছে, কি করেনি তা পরে বলব। কিন্তু এক ভাইয়ের কারণে অন্য ভাইকে অপরাধী করা যায় না। আমার বাবা যখন অসুস্থ্য ছিলেন, তখন আমার ভাই তাকে দেখাতে আসতেন। এ ছাড়া আমার সঙ্গে তার আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তার কারণে আমার জীবনে এমন খড়ক হতে পারে না। এ ছাড়া আমাকে গোপালগঞ্জ সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি বলে আমি এ কাজ করেছি এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আমাকে মিটিং করতে দেয়নি তা বলেননি। আমি মিটিং করেছি, আমাকে কেউ বাঁধা দেয়নি। আমি প্রথম তারেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করি। এ মামলায় ফজলুল কবির এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করেননি। তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি মিথ্যা-বানোয়াট ভিত্তিহীন চার্জশিট দিয়েছেন। আর কাহার আকন্দ মামলার আসামি, পরিধি ও সাক্ষী বৃদ্ধি করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন এ মামলায় পিন্টুর পক্ষে এ নিয়ে সপ্তম দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হল। পিন্টুর পর অপর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু হবে। আর লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত রায়ের দিন ধার্য করবেন।

২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় ইতিহাসে ভয়াবহতম নৃশংস বর্বরোচিত ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। হামলায় আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com