বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসমের কোকরাঝাড় থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বালাজান বাজারে ‘জঙ্গিদের’ গ্রেনেড হামলা ও গুলিতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের পাল্টা গুলিতে এক হামলাকারীও নিহত হয়েছেন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, এক হামলাকারীসহ ১৪ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের সংখ্যা আশংকাজনক।
বোড়োল্যান্ড এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ মহানির্দেশক এল আর বিশ্নোই বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নিহত জঙ্গি ন্যাশনাল ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) গোষ্ঠীর সদস্য। এটি দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন।
আনন্দবাজার জানায়, শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ একটি টাটা সুমোতে চেপে ৫-৭ জন সশস্ত্র ‘জঙ্গি’ বালাজান বাজারে নেমেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। সেই সঙ্গে গ্রেনেড
নিয়ে হামলা চালায়। ব্যস্ত বাজারে আচমকাই হামলা চালানোয় দিশেহারা হয়ে পড়েন মানুষ।
খবর পেয়ে কোকরাঝাড় জেলা পুলিশ এবং সিআরপিএফ-একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। খবর দেওয়া হয় সেনা জওয়ানদের। এরপরই জঙ্গি এবং নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। প্রায় আধঘণ্টা ধরে দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের পর নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হন। এ সময় তার কাছ থেকে একে-৫৬ রাইফেল ও একটি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়।
ডিজিপি মুকেশ সহায় জানিয়েছেন, এনডিএফবি (সংবিজিত) এই হামলার সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও জানান, যে গাড়িতে করে জঙ্গিরা এসেছিল সেটার নম্বরপ্লেট খতিয়ে দেখা গেছে ওই নম্বরের কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল দিল্লিতে রয়েছেন। রাজ্যে জঙ্গি হামলার বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরকে জানিয়েছেন।
রাজনাথ সিংহ পরে টুইট করে বলেন, “সর্বানন্দ সোনওয়াল বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে।”
সোনওয়াল বলেন, “হামলার তীব্র নিন্দা করছি। সরকার এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” পাশাপাশি, তিনি নিহত ও আহতদের জন্য ৫ লাখ ও ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ২ থেকে ৩ জঙ্গি হামলার পরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তাদের যাদের ধরার জন্য পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও সেনা সদস্যরা যৌথ অভিযান চালাচ্ছেন। বিশেষ করে নজর দেওয়া হচ্ছে কোকরাঝাড় আর ধুবরী জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে বোড়োল্যান্ড স্বশাসিত এলাকার প্রধান শহর কোকরাঝাড় থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে বালাজান তিনিয়ালী বাজারে ওই হামলা চালানো হয়। দ্বিসাপ্তাহিক ওই হাটে সে সময়ে প্রচুর মানুষ হাজির ছিলেন। সম্ভবত একটি অটোরিক্সায় চেপে হামলাকারীরা সেখানে পৌঁছায়।
প্রথমেই একটি গ্রেনেড ছোড়ে তারা। ওই বিস্ফোরণে আতঙ্কিত মানুষজন যখন ছুটে পালাতে যান, তখনই বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে থাকে জঙ্গিরা। কয়েকটি দোকানে আগুন ধরে যায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে।
বিস্ফোরণ আর গুলির আওয়াজ শুনেই নিরাপত্তাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। একজন মারা গেলেও বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে বাজারে আসা মানুষজনরাই আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় সাইকেল বা ভ্যানে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে শুরু করেন। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে যেমন বোড়োরা রয়েছেন, তেমনই আছেন বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান, রাজবংশীরাও।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল মৃত ও আহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন। রাজ্য মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বে এক মন্ত্রী দল ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন।
কোকরাঝাড় সহ বোড়োল্যান্ড স্বশাসিত অঞ্চলটিতে কয়েক দশক ধরেই জঙ্গি তৎপরতা চলছে, বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবী নিয়ে গড়ে ওঠা এই সশস্ত্র আন্দোলন প্রায় ১৫ বছর আগে কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। জঙ্গিদের একটি গোষ্ঠী মূলস্রোতে ফিরে এসে বোড়োল্যান্ড শান্তি চুক্তিতে সই করে।
হাগ্রামা মইলারীর নেতৃত্বাধীন ওই গোষ্ঠীটির হাতেই এখনও পর্যন্ত বোড়োল্যান্ড স্বশাসিত এলাকার শাসনভার রয়েছে। তারা রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকারে বি জে পি-র জোটসঙ্গী।
তবে আই কে সংবিজিতের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি এখনও সশস্ত্র পথ থেকে সরে আসেনি। তারা মাঝে মাঝেই হামলা চালায় ওখানকার বাঙলাভাষী মুসলমান, কখনও বা ক্রিশ্চান আদিবাসীদের ওপরে।
বোড়ো জঙ্গিদের অভিযোগ তাদের এলাকা দখল করে নিয়েছে বহিরাগত মুসলমান আর আদিবাসী ক্রিশ্চানরা।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস