বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: অস্ত্রোপচারের পর সিদ্দিকুর রহমান তাঁর ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না। বাঁ চোখে কখনো আলো দেখার কথা বলছেন। কখনো বলছেন, আলো দেখছেন না।
রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গিয়ে পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলে’ দুই চোখে আঘাত পাওয়া সিদ্দিকুরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্ক এই তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসকেরা সিদ্দিকুরের দুই চোখে অস্ত্রোপচার করেন। তাঁর সবশেষ অবস্থা নিয়ে রোববার সকালে চিকিৎসক বোর্ড বসে।
পরে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের অস্ত্রোপচারের পরও সিদ্দিকুর ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। বাঁ চোখের বিষয়ে কখনো বলছেন আলো দেখছেন, কখনো বলেছেন দেখছেন না। এটাকে কিছুটা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তাঁর দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। পরে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
মানববন্ধনে বাধা
সিদ্দিকুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ রোববার সকালে তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধায় তাঁরা মানববন্ধন করতে না পারার অভিযোগ করেছেন।
একাধিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাঁরা আজ রোববার সকালে কলেজের মূল ফটকের সামনে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সকাল থেকেই কলেজের ফটকে অবস্থান নিয়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দিতে থাকে। পরে তাঁরা কলেজের অদূরে আমতলী এলাকায় যান। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের মানববন্ধন কর্মসূচি পণ্ড করে দেন।
কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে তাঁরা আমতলীতে জড়ো হন। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডলার মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। কয়েকজনকে কলেজের ভেতরে ধরে নিয়ে যান। পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আনারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন তাঁকে কলার ধরে টানতে টানতে কলেজের ভেতরে নিয়ে যান। ধাক্কাধাক্কি করেন। অকথ্য ভাষায় গাল দেন।
সাইদুল হক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনার ছবি তুলছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের ছেলেরা তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি মুছে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডলার মাহমুদ প্রথমে বলেন, যাঁরা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কলেজের শিক্ষার্থীই না।
পরে কথা বদলে ডলার মাহমুদ বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থী হলেও কেন আমতলীতে গেলেন? তাঁদের মানববন্ধন করতে বাধা দেওয়া হয়নি। তাঁদের ডেকে এনে কথা বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রতিনিধি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস