বাংলা৭১নিউজ, মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরে অসহায় বৃদ্ধা সোনাভান বিবির সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে বসেছে বর্গা চাষীরা। বৃদ্ধার মালিকানাধীন প্রায় ২ একর জমি দীর্ঘদিন বর্গাচাষ করার পর এবার বর্গা চাষীরা জাল দলিলের মাধ্যমে জমির মালিক সেজে বসেছে। তারা এখন জমির ফসল বৃদ্ধাকে দেয়া তো দূরের কথা জমির মালিকদের দখলে যেতে দিচ্ছে না। সম্পূর্ণ অন্যায় এবং বে-আইনীভাবে উল্লেখিত জমি জোরপূর্বক ভোগ দখল করছে ভূমি দস্যুরা। এ ব্যাপারে বৃদ্ধার ছেলে জহিরুল হক ফকির মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বর্গাদার ওয়াদুদ শিকদার গংএর বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের ওয়াদুদ শিকদার গং সোনাভান বিবির জমি দীর্ঘদিন ধরে বর্গাচাষ করে আসছে। ঘটনার নেপথ্যে জানা গেছে, চরনাচনা গ্রামের আবদুল হক ফকির ও আবদুল অহেদ ফকির ১৯৫৩ সালে ৮৫নং চরনাচনা মৌজার আরএস ২২৫ খতিয়ানের ৩ একর ৮১ শতাংশ সরকারী সম্পত্তি নিলামে খরিদ করেন। পরে এ জমি এসএ জরিপে ২২৫ নং খতিয়ানে ১৭২০ নং দাগে উল্লেখিত জমির অর্ধেক ১ একর ৯০ শতাংশেরও বেশি আব্দুল হক ফকিরের নামে রেকর্ড হয়। স্বাধীনতা পর আব্দুল হক ফকির মারা যান। তিনি পেশায় একজন গ্রাম ডাক্তার ছিলেন।
আব্দুল হক ফকিরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সোনাভান বিবি ৭ ছেলে-মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। চরম দুঃখ-কষ্টে পড়ে পরিস্থিতির শিকার হন সোনাভান বিবি। সন্তানদের মুখে দু‘মুঠো ভাত তুলে দিতে তার সম্পত্তি স্থানীয় ওয়াদুদ শিকদার, সেলিম শিকদার ও শামীম শিকদারসহ অন্যান্যদের কাছে বর্গা দিয়ে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় বস্তিতে বসবাস করে মানুষের বাড়ি-বাড়ি কাজ করে জীবন ধারণ করতে থাকেন। সোনাভান বিবি ও তার সন্তানেরা এলাকায় না থাকার সুযোগে বর্গা চাষী ওয়াদুদ শিকদার গং এক পর্যায়ে সোনাভান বিবি ও তার ছেলে জহিরুল হককে বর্গা চাষের মালিকানা অংশের ফসল দেয়া বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয় বর্গা চাষী ওয়াদুদ শিকদার গং জাল দলিল করে নিজেরাই ওই জমির মালিকানা দাবী করে বসে। অথচ, ঐ জমির বিআরএস রেকর্ডে জহিরুল হক ফকির গংএর নামে রয়েছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, গত ইরি-বোরো মৌসুমে বর্গা চাষী সেলিম শিকদার গং জহিরুল হক ফকিরদের ইরি ধান জোরপূর্বক কেটে নেয়ার হুমকি দেয় এবং ঐ জমি তাদের বলে দাবী করে।
বর্গা চাষীদের নির্যাতনে অতীষ্ট হয়ে হতদরিদ্র জহিরুল হক ফকির মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত সংশ্লিস্ট তহশীলদারকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তহশীলদার তদন্ত শেষে জমির মালিকানা জহিরুল হক ফকিরদের উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ইতোমধ্যে অসহায় বৃদ্ধা সোনাভান বিবি ও তার ছেলেরা জমি ফিরে পেতে আইনী সহায়তার পাশপাশি মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
ঘটনাস্থল চরনাচনা গ্রামে জহিরুল ফকিরের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ৩টি অত্যন্ত জরাজীর্ণ ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর। জহিরুলের মা সোনাভান বিবি সম্পত্তি হারানোর আশঙ্কায় ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরের দরজায় বসে আহাজারী করছেন। অসহায় বৃদ্ধা সাংবাদিক দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে তিনি তার সম্পত্তি ফিরে পাবার জন্য আর্তি জানাতে থাকেন। বৃদ্ধা সোনাভান বিবির কাঁন্না দেখে সাংবাদিকের চোখ অশ্রু সিক্ত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, ওরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আপনারা (সাংবাদিক) ওদেরকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।’
বাংলা৭১নিউজ/জেএস