বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: আমাদের দেশে ত্বক ফর্সা করার লক্ষ্যে লেবুর ব্যবহার আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। গ্রামগঞ্জে, শহরে এমনকি রাজধানীতেও ত্বক ফর্সা করার কাজে লেবুর ব্যবহার কোনো অংশেই কম নয়। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে লেবু একটি সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। যে কারণে সৌন্দর্যচর্চার পর্বটিতে দেখা যায় কেউ হয়তো গোল চাকতির মতো করে কাটা এক খণ্ড লেবু নিয়ে মুখমণ্ডলে ঘষছেন, কেউ কনুইয়ের গাঢ় বর্ণের ত্বকে ঘষছেন, আবার কেউ হয়তো ত্বকে কাটা দাগের ওপর কিংবা তিলের ওপর লেবুর চাকতি দিয়ে রেখেছেন।
সৌন্দর্যচর্চায় লেবুর এমন ব্যবহার অনেকেরই চোখে পড়ে থাকবে। অনেকে হয়তো নিজেই এই কাজটি করেছেন। ত্বক ফর্সা করার জন্য সৌন্দর্যচর্চায় যারা লেবু ব্যবহার করছেন তাদের সবাইকে হতাশ করে দিয়ে বলতে হচ্ছে লেবুর সে রকম কোনো গুণ নেই। লেবু ত্বক ফর্সা করে না। আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর মধ্যে এমন কিছু নেই, যা ত্বক ফর্সা করতে পারে। লেবু ত্বকের লোমের রং হালকা করতে পারে না। অর্থাৎ লেবু ত্বকের লোমকে ব্লিচ করে চেহারা উজ্জ্বল করতেও সক্ষম নয়।
লেবু নিয়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল টেস্টে দেখা গেছে, লেবুতে ‘হাইড্রোকুইনন জাতীয় পদার্থ নেই। হাইড্রোকুইনন রাসায়নিক পদার্থ, যা ত্বকে রঞ্জক পদার্থ উৎপাদনে বাধা দেয়। অনেক ক্রিমেই হাইড্রোকুইনন রয়েছে। কিন্তু লেবুতে হাইড্রোকুইননের ছিটেফোঁটাও নেই। সাধারণভাবে রূপচর্চায় ব্যবহৃত ব্লিচিং এজেন্টে থাকে একধরনের পার অক্সিডেজ, যা ত্বক ও লোমের সংস্পর্শে জারিত হয়ে সেখান থেকে একটি ইলেকট্রনের বিচ্যুতি ঘটায়। ইলেকট্রনের এই কমতির ফলে ত্বক ও লোমের রঞ্জক রক্ষাকারী বন্ধন ভেঙে যায়। এভাবেই ব্লিচিং এজেন্টগুলো আপাতভাবে ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। যদিও এভাবে ত্বক ব্লিচ করা ত্বকের জন্য ভালো নয়, তবু সৌন্দর্যকামীরা এটা করছেন।
যাই হোক, লেবু ত্বক ও লোমের সংস্পর্শে কোনো জারণই ঘটাতে সক্ষম নয় বলে সেই গবেষণায় জানা গেছে। কাজেই এই প্রক্রিয়াতেও ত্বক ফর্সা করার ক্ষমতা লেবুর নেই, সেটা বলা যায়। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর রসে আছে সামান্য পরিমাণ ‘এইট-মেথোক্সিসোরালেন’। এই রাসায়নিক পদার্থটি ত্বককে হালকা বর্ণের না করে আরো গাঢ় বর্ণের করে দেয়। তবে এই ঘটনা খুব সহজে ঘটে না।
যদি কেউ লেবুর রস ত্বকে মেখে সূর্যালোকে যায় ও কিছুক্ষণ থাকে তাহলেই ত্বক গাঢ় হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে থাকে। সুতরাং রূপচর্চায় লেবুর অনর্থক অপচয় না করে সেগুলো রেখে দেন এককাপ ধূমায়িত চা তৈরির জন্য কিংবা ভোজনের পর্ব আরো সুস্বাদু করার জন্য।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইস