যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) টেন্ডার নিয়ে বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। জেলা বিএনপির সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর নেতৃত্বে বিএনপি কর্মীরা এসময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযুক্ত এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু ‘এ কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) জন্য ছয়টি গ্রুপে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়।
ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সবগুলো পায়নি। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে সব কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের তিনি তত্ত্বাধায়ককে লাঞ্ছিত করার নির্দেশ দেন।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ও উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে তার কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ।
তিনি প্রবেশ করেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন। এরমধ্যে ছোটলুর নেতৃত্বে আরও ৭- ৮ জন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ছোটলু হাবিবুল্লাহকে তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
নির্দেশ মতো তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে গেলে তিনি হাবিবুল্লার জামার কলার ধরে আত্মরক্ষা করেন। এসময় দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের অন্য স্টাফরা এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আ ন ম বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে আমি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যায়। এসময় বিএনপি নেতা ছোটলুর নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে তারা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছোটলু সাহেব সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক। সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। তিনি সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেন। সবকটি না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরবর্তী সময়ে তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমাকে আমার চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে। তখন আমিও আমার সম্মান রক্ষার্থে সেই ছেলেটিকে আটকাতে চেষ্টা করি।’
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন সেটা গ্রহণ করা হবে।
ফোনে হাসপাতালের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু বলেন, তিনি র্যালিতে রয়েছেন। হাসপাতালে কী ঘটেছে, না ঘটেছে এখন বলা যাচ্ছে না।’ এ কথা বলেই তিনি সংযোগ কেটে দেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে