টানা তিন সপ্তাহ পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর থেকে পাথর আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থলবন্দরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত আলী মিয়া।
তিনি জানান, বন্দরে ভারত থেকে পাথরবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পাথর আসায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটিতে। আজ ৯টি পাথরবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করবে। আগামী শনিবার থেকে পুরোদমে ভারত থেকে পাথর আসবে আমাদের বন্দরে। তবে ভুটানের পাথর আসা বন্ধ রয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর আমদানি শুরু হয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কর বৃদ্ধি করার কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের ভয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন। শুল্ক বিভাগের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। সে ভিত্তিতেই আমদানিককারকরা পাথর আমদানি করতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার কিছু পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে। পাথর আসার মধ্য দিয়ে বন্দরে আবার সেই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
এর আগে পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, ৩১ জুলাই শুল্ক বিভাগ ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে প্রতি মেট্রিক টন ভারতীয় পাথরে (বোল্ডার) অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (শুল্ক) ১২ ডলার থেকে ১৩ ডলার করার কথা জানায়। আর ভুটানের পাথরে (ভাঙা পাথর) প্রতি মেট্রিক টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (শুল্ক) ২১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৪ ডলার করা হয়েছে। এ রেটে পাথর আমদানি করলে লোকসানে পড়তে হবে ভেবে তারা ১ আগস্ট থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন।
এতে করে ভারত থেকে টানা ২৩ দিন ও ভুটান থেকে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দরটিতে পাথর আসা বন্ধ থাকায় বন্দরটি অচল হয়ে পড়ে। বন্দরটিতে ৯৫ ভাগু পাথর নির্ভর হওয়ায় ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন ৩৫০-৪৫০ ট্রাকে পাথর আমদানি হতো। সেখানে পাথর না আসায় কর্মচাঞ্চল্য হারিয়ে ফেলে বন্দরটি। কর্মহীন হয়ে পড়েন হাজারো শ্রমিক।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওই অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থবছরের জুন মাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জুনে আদায় বেশি হয়েছে ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু কিছু দিন পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
তবে পাথর আমদানি ছাড়াও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত ও নেপাল থেকে মেশিনারিজ, প্লাস্টিক দানা, ভুট্টা, অয়েল কেক (খৈল), আদা, গম, চাল, ফল ইত্যাদি এবং নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। একইভাবে দেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, ব্যাটারি, কোমল পানীয়, গার্মেন্টস সামগ্রী, ক্যাপ, হ্যাঙ্গার, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, পার্টস, কটনব্যাগ, ওষুধ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য রপ্তানি চলমান রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ