বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: একজন বয়স্ক ব্যক্তি একটি বালিকাকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরে আছে, প্রথম দর্শনে উপরের ছবিটি দেখে মনে হবে পারে বেশ হাসিখুশি একটা ব্যাপার।
কিন্তু ভালো করে তাকালে এর অন্ধকার দিকটি ধরা পড়বে। কারণ এই ব্যক্তি অ্যাডলফ হিটলার, যে ৬০ লাখ ইহুদি ধর্মাবলম্বীকে হত্যা করেছে, এই বালিকাটিও একজন ইহুদি।
তা সত্ত্বেও, হয়তো রোসা বেরনিল নেইনাউয়ের সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্ব টিকেই থাকতো, যদি উচ্চপর্যায়ের নাৎসি কর্মকর্তারা সেখানে নাক না গলাতেন।
ছবিটি তুলেছিলেন হেইনরিক হফম্যান। কিছুদিনের মধ্যে এই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে নিলামে উঠতে যাচ্ছে, যার দাম ১০ হাজার ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগেও রোসা এবং হিটলারের ছবি দেখা গেলেও, হিটলারের স্বাক্ষর করা বা রোসার ফুলের ছবি আকা ছবিটি আগে দেখা যায়নি।
একই দিনে জন্মদিন হওয়ার কারণেই এই ইহুদি ছোট্ট মেয়ে আর হিটলারকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল।
নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ১৯৩৩ সালে আলপাইন রিট্রিট বেরগফে হিটলারের বাড়ির বাইরে তার জন্মদিন উপলক্ষে আরো অনেকের সঙ্গে সমবেত হয়েছিলেন রোসা এবং তার মা ক্যারোলিন।
ধারণা করা হচ্ছে, যখন হিটলার জানতে পারেন যে, রোসার জন্মদিনও তার একই দিনে, তখন তিনি রোসা এবং তার মাকে বাসায় আমন্ত্রণ জানান। সেই বাসাতেই এই ছবিটি তোলা হয়।
তবে খুব তাড়াতাড়ি এটা জানা যায় যে, ক্যারোলিনের মা ছিলেন একজন ইহুদি, সুতরাং তখনকার নাৎসি কর্মকর্তাদের চোখে রোসাও একজন ইহুদি বলে মনে করা হয়।
কিন্তু সেটি এই ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্বে বাধা হতে পারেনি। দুজনের তোলা একটি ছবিতে স্বাক্ষর করে রোসার কাছে পাঠিয়েছিলেন হিটলার।
ছবিটি দেখে বোঝা যায়, এরপরে রোসা সেই সাদাকালো ছবিটির ওপর নানা ফুলের ছবি আঁকে।
১৯৩৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে অন্তত ১৭টি উপলক্ষ ধরে হিটলারের কাছে চিঠি লিখেছিল রোসা।
কিন্তু নাৎসি এই নেতার ব্যক্তিগত সচিব, মার্টিন বোরম্যান একসময় আর যোগাযোগ না করার জন্য তাদের জানালে, সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
‘হিটলার আমার বন্ধু ছিল’- বইয়ের লেখক এবং আলোকচিত্রী হেইনরিক হফম্যান পরবর্তীতে লিখেছেন, সেই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না হিটলার।
”আমার প্রতিটি আনন্দ ভঙ্গ করে দেয়ার জন্য এখানে কিছু মানুষ আছে,” বলে তার কাছে মন্তব্য করেছিলেন হিটলার।
১৯৫৫ সালে লেখা তার ওই বইতে রোসার সঙ্গে হিটলারের তোলা দুইটি ছবি সংযোজন করেন হেইনরিক হফম্যান, যার শিরোনাম দিয়েছিলেন, ‘হিটলারের প্রিয় বালিকা, বেরগফে যাকে দেখে তিনি আনন্দ পেতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু লোক খুঁজে বের করে যে, সে পুরোপুরি আর্য নয়।”
যে বছর রোসাকে আর যোগাযোগ না করার জন্য বলা হয়, তখন থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু। ছয় বছর পর যখন তার সমাপ্তি ঘটে, ততোদিনে ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়েছে।
সেই যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পারেনি রোসাও। হিটলারের সঙ্গে পরিচয়ের দশ বছর পর, ১৯৪৩ সালে মিউনিখের একটি হাসপাতালে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ বছর বয়সে মারা যায় রোসা।সূত্র: বিবিসি বাংলা।
বাংলা৭১নিউজ/এমএম