বগুড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩২ জনকে বগুড়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেয়া হয়।
বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোড়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই সংঘর্ষ হয়।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ একাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ওই টিয়ারশেলের ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রেণিকক্ষে থাকা ছাত্রীরা অসুস্থ হয়।
হাসপাতালটির নার্সিং সুপার ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বেশি অসুস্থদের হাসপাতালের অব্যবহৃত বার্ন ইউনিটের আইসিইউ কক্ষে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কারও চোখে জ্বালা পোড়া বেশি। কারও শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে। আমরা অবস্থা দেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। এখন অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।’
আইসিইউ শয্যায় চিকিৎসাধীন নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘দুপুরে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে শব্দ শুনি। এরপর ক্লাসের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি। মেয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসক।’
ইয়াকুবিয়া স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বদরুন্নাহার বলেন, ‘১টার দিকে মেয়েরা অসুস্থ হতে থাকে। প্রথমে আমি কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষক, আয়া তারাও মেয়েদের নিয়ে আসেন।’
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস কবির বলেন, ‘প্রথমে আমরা ছাত্রীদের ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে আসি। পরে অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের অন্তত এক দেড়শ ছাত্রী অসুস্থ হয়। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়। অনেকের বাবা-মা এসে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন।’
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘স্কুলের পাশের সড়কে টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে ছাত্রীরা ধোঁয়ায় বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকের সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট হয়েছে।’
ডা. কাজল আরও বলেন, ‘ছাত্রীরা ভয়ও পেয়েছে। তবে এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। আর হাসপাতালে অনেক লোকজন ভিড় করছেন, এতেও তারা নার্ভাস থাকছে।’
খবর পেয়ে অসুস্থ ছাত্রীদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ অন্যান্য নেতারা। পরে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু আসেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা মিছিলটি ইয়াকুবিয়া মোড়ে এসে সোজা রাস্তা দিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করতে যায়। ওই সময় মিছিলটিকে বাধা দেয় পুলিশ। এ বাধাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
মিছিলের পেছন থেকে লাঠি সোটা, ইট ছুড়তে থাকেন তারা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হলে টিয়ারশেল পরবর্তীতে রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি